শিবচরণ কহিল, জড়োয়া গহনা! আমি যা তোমাকে দিয়েছি, কোন্ শালার বেটা তা চোখে দেখেছে? পরিবারকে আজ পর্য্যন্ত দুগাছা চুড়ি ছাড়া আর গড়িয়ে দিতে পার্লি নে! বাবা! টাকার জোর বড় জোর! জুতো মারব আর—
হরিলক্ষ্মী ক্ষুণ্ণ ও অতিশয় লজ্জিত হইয়া বলিল, ছি ছি, ও-সব তুমি কি বল্ছ?
শিবচরণ কহিল, না না, আমার কাছে লুকোছাপা নেই—যা বল্ব, তা স্পষ্টাস্পষ্টি কথা।
হরিলক্ষ্মী নিরুত্তরে চোখ বুজিয়া শুইল। বলবারই বা আছে কি? ইহারা দুর্ব্বলের বিরুদ্ধে অত্যন্ত রূঢ় কথা কঠোর ও কর্কশ করিয়া উচ্চারণ করাকেই একমাত্র স্পষ্টবাদিতা বলিয়া জানে। শিবচরণ শান্ত হইল না, বলিতে লাগিল, বিয়েতে যে পাঁচশ টাকা ধার নিয়ে গেলি, সুদে-আসলে সাত-আটশ হয়েছে, তা খেয়াল আছে? গরীব একধারে প’ড়ে আছিস্ থাক্, ইচ্ছে কর্লে যে কান ম’লে দূর ক’রে দিতে পারি। দাসীর যোগ্য নয়—আমার পরিবারের কাছে গুমোর।
হরিলক্ষ্মী পাশ ফিরিয়া শুইল। অসুখের উপর বিরক্তি ও লজ্জায় তাহার সর্ব্বশরীর যেন ঝিম ঝিম করিতে লাগিল।