পাতা:হলুদ পোড়া - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SGło হলুদ পোড়া রীড হারমোনিয়াম ও ময়লা কাপড়ের বেঁচেক হইতে আরম্ভ কুরিয়া চালের বস্তা, ডালের হাড়ি, মসলা রাখা টিন, ঝুড়ি ভরা কড়াই, গান্তি হাত প্রভৃতি রান্নার সরঞ্জাম, এক পোটুলা অৰ্দ্ধ শুষ্ক পুইশাক এমন কি গোনার মাখা গরু বাধা দড়ি পৰ্য্যন্ত গাড়ীর ছাদে স্থান পাইয়াছে। ক্ষুদ্র এক টুকরি কয়লাও ইহারা মমতা বশে ফেলিয়া আসে নাই। ঘুম ভাঙ্গিয়া চোখের সামনে এ যেন পরম উপভোগ্য দ্রষ্টাব্যের আবির্ভাব । সকাল বেলার আলস্য এ হেন উপলক্ষ্য পাইয়া সুমিষ্ট হইয়া উঠিল। মন্থর চিন্তাযুক্ত মন নিয়া স্তিমিত নেত্ৰে হেরম্ব আরোহীর অবতরণ দেখিতে লাগিল। প্ৰথমে নামিল একটি দৈত্য। গায়ের রঙ নিকষ। কালো, মাথার চুল ধবধবে সাদা । বয়স বড় কম হয় নাই, কিন্তু যে গ্রামে ইহার বাস তার আশে পাশে ডাকাতি হইলে এখন পৰ্যন্ত পুলিশ সৰ্ব্বপ্রথমে ইহাকে ধরিয়া নিঃসন্দেহ টানাটানি করে। গায়ের বিবৰ্ণ খাকী সার্টটা শরীরের চাপে ফাটিয়া যাওয়ার উপক্ৰম করিয়াছে, পরণে ছয় হাত মলিন ধুতি, নিজেও সে পাঁচ হাতের কম লম্বা নয়, পায়ে ধুলি-মলিন চাট । তুচ্ছ মানুষ, দেহের মানুষ। শক্তি যতই থাক, কুরূপের সীমা নাই তবু হেরন্মের দু'চোখে ঈৰ্ষা ঘনাইয়া আসিল। " কিন্তু সে মুহুর্তের জন্য। এক হাতে গাড়ীর দরজা চাপিয়া ধরিয়া অন্য হাতে সাড়ীর প্রান্ত উচু করিয়া (ইটুর কাছে একটি লম্বা ক্ষতের দাগ হেরম্বের চোখে পীড়িল ; বহুদিন পরে মেয়েটির কথা ভাবিতে গেলে এই চিহ্নটি সর্বপ্রথমে তাহার স্মরণে আসিতা) এবার যে সন্তৰ্পণে অবতরণ করিল। তাহাকে দেখিলে চোখের পলক বন্ধ হইয়া যায়। দৈত্যের পিছনে এ যেন অপহৃত রাজকন্যার আবির্ভাব। আধ হাত ঘোমটায় মুখ ঢাকা পাছাপাড় কোরা সাড়ী পরা দৈত্য