পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
হারানাে খাতা

ওদিকে সখের ঝিলে সাধের তরণী "পরিমল” ভাসিতেছে ; বাবুরদল এতক্ষণ ইহাতেই জল-বিহার করিতেছিলেন। এদিকে সেদিকে দুচারিটা কণ্ঠিতিলকপরা উড়িষ্যাবাসী মালি ক্ষিপ্রহস্তে এগাছ ওগাছ হইতে ফুলপাতা ছিড়িয়া লইয়া বাবুদের জন্য তােড়া প্রস্তুত করিতেছিল। রাজাবাহাদুরের বন্ধুবর্গ অন্যমনস্কভাবে অলসকণ্ঠে গান ধরিয়াছেন,—

হেলা ফেলা সারাবেলা
একি খেলা আপন সনে,—
এই বাতাসে ফুলের বাসে
মুখখানি কার পড়ে মনে।

 ফটকের বাহিরে একখানা মােটর গাড়ী ও হাতীর মত বড় কালো ঘােড়া যােতা একখানা ঝকমকে ল্যাণ্ডো ইহাদের আগমন প্রতীক্ষা করিয়া দাঁড়াইয়াছিল। বাবুদের অগ্রসর হইতে দেখিয়া তাহার চামরঝুলান ঝুটাজরির চমকদার পােষাক পরা সহিস কোচম্যান, মায় যাত্রার দলের ভীমসেনের মত গালপাট্টা ওয়ালা, দীনদরিদ্রের সাক্ষাৎ শমনসদৃশ গানবাড়ীর দ্বারপালেরা আভূমি নত হইয়া সেলাম ঠুকিল।

 তখন রাজা নরেশচন্দ্র তাঁহার পার্শ্বস্থ বন্ধুরীকে সম্বােধন করিয়া বলিলেন “তাহলে নলিন! আজ বাড়ীই ফেরা যাক্— সন্ধ্যেও ত হয়ে গেছে; আর একদিন তখন তোমাদের গান শােনান যাবে, কি বলো হে?”

 নলিন্ বলিয়া যাহাকে সম্বােধন করা হইয়াছিল সেই সুপরিচ্ছদধারী ভদ্রলােকটী নভরে অন্যদিকে মুখ ফিরাইয়া ছাড়াছাড়া কথায় জবাব দিলেন, “সে আপনার অভিরুচি। আমি আর তাতে কি বল্‌বো বলুন? তবে দেখুন, সব বিষয়েরই ত একটা সীমা আছে। ভাবের উচ্ছ্বাসে আপনি যেন সেই সীমাটা না ছাড়িয়ে যান, এই টুকুই শুধু আমাদের মনে করিয়া দেওয়া।”—এ বলিয়া আর একজনের দিকে