পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হাৱানাে খাতা।
১১১

 নরেশ গভীরতর একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস মোচনপূর্ব্বক ভারাক্রান্তচিত্তে মৃদুস্বরে কহিলেন, “আচ্ছা।”

 দুজনে পাশাপাশি অর্দ্ধ অন্ধকার সিঁড়ি বাহিয়া নিঃশব্দে নামিয়া আসিল। রাত্রি তখন গভীর হইতে আরম্ভ করিয়াছে। উঠানভরা চাঁদের আলো যেন থমথমে নিঝুম হইয়া আছে। অঙ্গনের এক পার্শ্বে পেয়ারা গাছটায় একটা পাখী সেই প্রস্ফুট চন্দ্রালোককে দিবালোক ভ্রম করিয়া ঘুমভাঙ্গা ভাঙ্গাগলায় মিনতি করিয়া বলিতেছিল—“বউ কথা কও! বউ কথা কও!”

 বহির্দ্বারের কাছাকাছি আসিয়া হঠাৎ সুষমা দাঁড়াইয়া পড়িল, নরেশচন্দ্র নিতান্ত বিমনা থাকিলেও তাহার এই আকস্মিক অচলতা তিনি অনুভব করিলেন। চলা বন্ধ করিয়া ফিরিয়া চাহিতেই কাছে আসিয়া তাঁহার পায়ের কাছে নত হইয়া সুষমা হঠাৎ কান্নধরা দীর্ঘশ্বাসের সহিত তাড়াতাড়ি কহিয়া উঠিল, “অত্যন্ত লোভ হলেও বড় হয়ে অবধি কখনও আপনাকে স্পর্শ করে আপনার পায়ের ধূলো আমি মাথায় নিতে সাহসী হইনি। শুধু আজকের মতন একটীবার আমায় সেই অধিকারটুকু নিতে দিন।”

 এই বলিয়াই অনুমতির অপেক্ষা না রাখিয়া সে উপুড় হইয়া উহাঁর দুই কম্পিত পায়ের উপরে মাথা রাখিল এবং বিলম্বে সেখান হইতে নিজের মাথার চুলে মুছিয়া জুতার ধুলা তুলিয়া লইয়া মাথায় দিয়া উঠিয়া দাঁড়াইল।

 নরেশ তাহার মুখ দেখিতে পাইলেন না, দেখিতে চেষ্টাও করিলেন না, দ্রুতপদে বাহির হইয়া গিয়া গাড়িতে উঠিলেন।

 তারপর তিন বৎসরের পরে এই দেখা।