সময়কার নীল চশমা ও গায়ে একখানা মোটা র্যাপারে সে নিজেকে লুকাইবার ইচ্ছায় ঢাকা দিয়া আসিয়াছিল। কিন্তু তাহার দিকে চোখ পড়িতেই বিশ্বপ্রিয় যেন আশ্চর্য্য বোধ করিলেন। রাজা নরেশের আশ্রিতা যে এতটাই ছেলে মানুষ এ ধারণা তাঁর মোটেই ছিল না। আরও বিস্ময়বোধ হইল তার নিরাড়ম্বর ও অদ্ভুত বেশভূষা দেখিয়া। —এ যেন একটী নেহাৎ সাদাসিদা স্কুলের মেয়ে। একে আর কিছু যে মনে করিতেই পারা যায় না।
ধীর এবং স্থিরকণ্ঠে সুষমা উত্তর করিল, “তিনি যা বলেছেন সবই সত্যি। শুধু তাঁকে অনুগ্রহ করে বলে দেবেন, আমি তাঁর বাড়ী আর চাকরী করবো না, তাঁরা যেন দয়া করে আমায় বিরক্ত না করেন।”
অনুমানে সকল কথাই বুঝিয়া লইয়া বিশ্বপ্রিয় কিছু দুঃখিত কিছু অপ্রতিভ হইয়া পড়িয়াছিলেন, মৃদু মৃদু বলিলেন “রাস্কাল! আচ্ছা তাকে আমি দেখে নেবো। কিন্তু আপনার কাছে আমিই অপরাধী হয়ে পড়লেম। আচ্ছা এবারে আমি বিশেষ জানাশোনা ভদ্রঘর দেখে আপনার জন্য খুব ভাল চাকরী ঠিক করে দেব দেখবেন।”
সুষমা নতমুখে বলিল “আমার আর চাকরীর ইচ্ছা নেই।”
বিশ্বপ্রিয় সলজ্জে মাথা হেঁট করিলেন এবং তারপর নত মুখেই কহিলেন “সংসারে মিঃ গুহ অল্পই জন্মায় জান্বেন।”
সুষমা কহিল “তা, আমি জানি, কিন্তু আমার স্থানও যে বড়ই স্বল্প পরিসর। ক’জন আমায় বাড়ী ঢুকতে দিতে রাজী হবেন?”
এই অকুণ্ঠিত ও নির্ভীক আত্মাভিব্যক্তিতে বিশ্বপ্রিয় একদিকে যেমন অপ্রতিভ হইয়া পড়িলেন তেমনি আর একদিক দিয়া ইহাতে তাঁহার আলোচনার পথও মুক্ত হইয়া গেল। তিনি তখন ঘরের মধ্যের দ্বিতীয় চৌকিখানি টানিয়া দিয়া সুষমাকে বলিলেন “বসুন, আপনার সঙ্গে