পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/২০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হারানাে খাতা।
১৯৯

 “তার পর সুখদা মায়ের হুকুম মতন আমার জন্যে জলখাবার নিয়ে কালীপদর মতন, তাই আমার আরও আপত্তি নেই।’

 “সুখদার মা এবার যে কান্নাটা কাঁদলেন তারমধ্যে আধখানা দুঃখের এবং আধখানা সুখের। সেই ছেলেই তো তাঁকে মহাদেবের মতন জামাই দিয়ে গিয়েছে।—এই কথাটা এ ক্রন্দনের মধ্যে প্রধান হয়ে রৈলো।

 “মাস পাঁচেক পরে পড়াশোনা সাঙ্গ করে ঘরে এসে বসলুম।”

 “ওইখানকারই সবজজের মেয়ের সঙ্গে আমার বিয়ের কথা বছর পার হয় চলে আসছিল। মেয়ে আমি দেখেছি, চারুমতীকে দেখতে বোধ করি ভালই হবে, যা একটু বেশী মোটা। তা ধনীর দুলালীরা ওরকম হবেন বই কি! গণে পণে, অলঙ্কার, বস্ত্রে, এবং আসবাবপত্রে জজবাবু হাজার সাতেক টাকা মেয়ের প্রতি খরচ করবেন একথাও নাকি ধার্য্য হয়ে গিয়েছিল। আমি বাড়ী এসে বস্‌তেই তিনি লোক নিয়ে পাকা দেখার দিন ঠিক করে বলে পাঠালেন।

 “মা খুব খুসী, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর হরিষে বিষাদ হলো। মাকে সুখদার কথা ভেঙ্গে বলে জানালুম যে এ বিয়ে করা চলে না। আমি কথা দিয়েছি। মার মনে যে আঘাত লাগলো সে আমি বুঝেছিলেম। মা আমার এক সন্তানের জননী, কুটুম্বিতার সাধ একটা নারীজন্মের নাকি ঈপ্সিত। যাই হোক তবু আমার কথা বজায় রাখবার জন্যে তাঁর ধনী কুটুম্বের সাধ তিনি ছেড়েই দিলেন।

 জজবাবু নিজে এসে আমায় ডেকে বল্লেন, ‘জানো তুমি, তোমার মার নামে আমি ‘ব্রিচ অফ্ কণ্টাক্টের কেস’ করতে পারি।’

 “তা’ অবশ্য আমি জানতাম না। আর যতই কিছু পড়িনা কেন, আইনতো আর পড়িনি, জান্‌বো কেমন করে? একটু ভেকা হয়ে রইলুম। তিনি তখন আমায় কাবু দেখে অনেক কথাই বল্লেন এবং তক্ষুণি গালি ফিরিয়ে নিয়ে আমার ‘আশীর্ব্বাদ’ করে যেতেও রাজী আছেন, তাও