জানিয়ে দিতে দেরী করলেন না। ততক্ষণে আমার জড়তা কাটলো আমি বল্লেম, ‘আমি আর একজনকে কথা দিয়েছি; তারা গরীব অনন্যোপায়, তাদের বঞ্চনা করলে ঈশ্বরের দরবারে আমি দোষী বেশী হবো। আপনার ভাবনা কিসের?’
“কথাটা খোসামোদেরই ছাঁচে ঢালা। তাতেই বাবুটীর রাগ বাড়িলেও মাত্রাটা কিছু যে কম থাকলে সে বোধ করি উহারই জন্য। তিনি রুষ্ট পরিহাসে রূঢ় প্রশ্ন করলেন, ‘তিনি কাঁর মেয়ে শুনি’?
“আমি বিনীতবচনে জবাব দিলাম, ‘তার বাপ ছিলেন কালেক্টরির সেরেস্তাদার, একমাত্র ভাইএর রাজদ্রোহের অপরাধে যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর হয়েছে, বুড় মা ছাড়া অপর কেউ নেই।’
“জজবাবু যেন আঁৎকে উঠেই উঠে দাঁড়ালেন। রাজদ্রোহের নামেই বোধ করি তাঁর হৃৎকম্প উপস্থিত হয়ে থাকবে! এবার স্পষ্ট পরিহাসেই বল্লেন, ‘তাহলে কুটুম্ব নির্ব্বাচনটা করেছ ভাল! যাহোক সময় থাকতে খবরটা পেয়ে ভালই হলো, এনার্কিষ্টের দলে মেয়ে দিয়ে কি শেষে ধনে প্রাণে মারা যেতাম।’
“মার অনুমতি নিয়ে কালীপদর মা বোনকে মার আশ্রয়ে এনে দিলাম। ভাবী পুত্রবধুর মুখ দেখে মা যে আমার খুব উল্লসিত হয়ে উঠেননি, সেতো আমি বুঝতে পেরেছিলুম, কিন্তু এ নিয়ে আমাদের মাতাপুত্রে কোন আলোচনাই আমরা হ’তে দিইনি। মন তার কল্পনার স্বর্গের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে চাইবে বইকি! নিজের ছেলের মস্ত নামওলা শ্বশুর, আর সুন্দরী বউ কোন মা কবে চায়নি? অথচ কর্ত্তব্যের খাতিরে কতকিই না করতে হয়। ক’জনের মাই বা ভরাবুকে বউ ঘরে তুলতে পেরেছেন। সয়ে যাওয়া দরকার,—চুপ করে সবই সয়ে যাওয়া,যা পাই তাকেই যথাসাধ্য ভাল মনে করা—এই টুকুই যে মস্ত বড় দরকার। ঐটুকু না পারলেই যে মানুষ একেবারে গেল।”