পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হারানো খাতা।
৫৯

সৎশাশুড়ী ও তাঁর মেয়ে অলকানন্দা এই দুজন মাত্র লােক এখানে আসিয়াছিলেন। সৎমা হইয়াও যে তিনি নরুর পাশে অমন বউ সহ্য করিতে পারেন নাই, এঠাও অকৃত্রিম সত্য সংবাদ। তিনিও নাকি গরীবেরই মেয়ে। চেলি-নন্দন ও ফুলের মালায় সাজাইয়া তাঁর গরীব বাপ তাঁহাকে লক্ষপতি গিরীশচন্দ্রের পঞ্চান্ন বৎসর বয়সের সময় তাঁর হাতে সম্প্রদান করেন। কিন্তু এক হিসাবে যে সেই নিঃস্ব গরীবের মেয়ে অনেক ধনাঢ্য কন্যাকে লজ্জা দিয়া দশের মধ্যে মাথা খাড়া করিয়া দাঁড়াইতে পারিতেন, সে তাঁর অনবদ্য সৌন্দর্য্যের জোরে। সেই জিনিষটারই যে পরিমলের বিশেষ অভাব ঘটিয়া গিয়াছে। তাই ধনীর মেয়ে না হইয়াও যিনি রাজার মেয়ের মতই নিজের আনমিত রূপের গৌরবে, উচ্চ গ্রীবায়, বক্র কটাক্ষে, মাটির জগৎকে তাচ্ছিল্য ভরে চাহিয়া দেখিতে অভস্ত, তাঁরও কঠিন নেত্রের অবজ্ঞাসূচক দৃষ্টিতে এই নিঃস্ব ভিখারিণী পরিমল ঘৃণা-লজ্জায় পলে পলে মাটিতে মিশিতে চাহিয়াছে। সে সব কথা ফিরিয়া ফিরিয়া আজ তাহার মনের বুকে ফুটিয়া থাকা কাঁটার মতই আবার খচ খচ করিয়া উঠিল। সেই সময়কার একদিনের মাতা-পুত্রের আলাপ দৈবাৎ তার কাণে যায়, সেই কথা কয়টা ব্যথার উপর তীক্ষ্ণ-প্রলেপের জ্বালার মতই স্মৃতির মধ্যে ভাসিয়া উঠিল। তাহার স্বামীকে ডাকাইয়া তাঁর প্রায় সমবয়সী বিমাতা পদ্মাবতী অনুযােগ করিয়া বলিলেন “দেশে থেকেই শুনেছিলেম যে, তুমি এক চাটগেঁয়ে ধেড়ে মেয়ে কুড়িয়ে এনে এতবড় মিত্তির বাড়ীর বউ করে দিচ্চো; কিন্তু তখন স্বপ্নেও ভাবিনি যে সে মেয়ের রূপের দিকটাতেও এখন কালিঢালা। এ কেলেঙ্কারী করার চাইতে তুমি এত দিন বিয়ে করবে না বলে যে পথ নিয়ে চল্‌ছিলে—সেও যে ছিল ভাল। সে তবু না হয় বােঝা যায়, এ যে একেবারেই দুর্ব্বোধ্য!”