পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৮
হারানাে খাতা।

মনের সঙ্গে সেটা ঠিক সায় দিচ্ছে না। তুমি সেদিকে মন দিতে পরচো না।—”

 সুষমা কহিল, “তাই বা পারচি কই?”

 নরেশ ক্ষণকালের জন্য চিন্তিত নীরব থাকিয়া পরে একটা নিশ্বাস ফেলিয়া কহিতে লাগিলেন “কিন্তু একটা মানুষের জীবন যে কোন রকমের কর্ম্মবন্ধন শূন্য, নিরালম্ব ও ভবিষ্যতের আশাভরসাবিহীনভাবে টেঁকে থাকতে পারে না, সে ত তুমি ক্রমেই বুঝতে পারচো? তাই অনেক ভেবেই আমি—যাক্ কিন্তু হিন্দুসমাজ ছাড়া অন্য যে সব সমাজে সমাজবিধির নিয়ম একটু শিথিল, সেখানের কোন কোন লোকে—”

 যে কথাটা নরেশচন্দ্রের জিভের আগায় আট্‌কাইয়া পড়িতেছিল, সেটা শেষ করিবার প্রয়োজনও হইল না। অকস্মাৎ উচ্চ এবং মর্ম্মভেদিকণ্ঠে, “আপনি এই কথা বল্লেন!—”

 এইটুকু বলিয়া উঠিল এবং তারপরই বক্ষবিদ্ধ ঘুরিয়াপড়া পাখীর মত স্খলিতপদে সুষমা প্রায় ছুটিয়া চলিয়া গেল। তাহার বুক চিরিয়া তাহার কণ্ঠ ভেদ করিয়া তখন একটা উদ্দাম ক্রন্দন ঝরণার মতই বেগে ছুটিয়া বাহিরে আসিতে চাহিতেছিল, তাহাকে সে যে কোন মতেই ঠেকাইয়া রাখিতে পারিতে ছিল না।

 নরেশচন্দ্র অপরাধীর মত মাথা নত করিয়া একাকী সেইখানে দাঁড়াইয়া রহিলেন। তাঁহারও বুকের মধ্যে তখন একটা সহানুভূতিপূর্ণ ব্যথার সমুদ্র উত্তাল হইয়া উঠিতেছিল। বহুদিনের পুরাতন অথচ অ-বিস্মৃত স্মৃতি মনের মধ্যে যেন নূতন হইয়া আবার ফুটিয়া উঠিল।