পাতা:গল্পগুচ্ছ (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৮২: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
পাইউইকিবট স্পর্শ সম্পাদনা |
|||
পাতার অবস্থা | পাতার অবস্থা | ||
- | + | মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে | |
শীর্ষক (অন্তর্ভুক্ত হবে না): | শীর্ষক (অন্তর্ভুক্ত হবে না): | ||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
{{rh|৫৯২|গল্পগুচ্ছ|}} |
|||
পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে): | পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে): | ||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
{{gap}}রাসমণি বলিলেন, “প্রয়োজন নাই তাে কী।” |
|||
৫৯২ গল্পগুচ্ছ |
|||
<br> |
|||
রাসমণি বলিলেন, “প্রয়োজন নাই তো কণী ।” ভবানীচরণ কহিলেন, “কবিরাজ বলে, উহাতে পিত্তবন্ধি হয়।" রাসমণি তীক্ষভাবে মাথা নাড়িয়া কহিলেন, “তোমার কবিরাজ তো সব জানে!" ভবানীচরণ কহিলেন, “আমি তো বলি, রাত্রে আমার লুচি বন্ধ করিয়া ভাতের ব্যবসথা করিয়া দিলে ভালো হয়। উহাতে পেট ভার করে।" |
|||
{{gap}}ভবানীচরণ কহিলেন, “কবিরাজ বলে, উহাতে পিত্তবৃদ্ধি হয়।” |
|||
⚫ | |||
<br> |
|||
ভবানীচরণ সব প্রকার ত্যাগস্বীকার করিতেই প্রস্তুত— কিন্তু, সে দিকে ভারি কড়াক্কড়। ঘিয়ের দর বাড়িতেছে তব লাচির সংখ্যা ঠিক সমানই আছে। মধ্যাহ্নভোজনে পায়সটা যখন আছেই তখন দইটা না দিলে কোনো ক্ষতিই হয় না— কিন্তু, ' বাহুল্য হইলেও এ বাড়িতে বাবরা বরাবর দই পায়স খাইয়া আসিয়াছেন। কোনোদিন । ভবানীচরণের ভোগে সেই চিরন্তন দধির অনটন দেখিলে রাসমণি কিছুতেই তাহা সহা করিতে পারেন না। অতএব গায়ে-হাওয়া-লাগানো সেই মেমমতিটি ভবানীচরণের দই পায়স ঘি লুচির কোনো ছিদ্রপথ দিয়া যে প্রবেশ করিবে এমন উপায় দেখা গেল না। ভবানীচরণ তাঁহার গরপত্রের বাসায় একদিন যেন নিতান্ত অকারণেই গেলেন এবং বিস্তর অপ্রাসঙ্গিক কথার পর সেই মেমের খবরটা জিজ্ঞাসা করিলেন। তাঁহার বতমান আর্থিক দগতির কথা বগলাচরণের কাছে গোপন থাকিবার কোনো কারণ নাই তাহা তিনি জানেন; তব আজ তাঁহার টাকা নাই বলিয়া ঐ একটা সামান্য খেলনা তিনি তাঁহার ছেলের জন্য কিনিতে পারিতেছেন না, এ কথার আভাস দিতেও তাঁহার যেন মাথা ছিড়িয়া পড়িতে লাগিল। তব দুঃসহ সংকোচকেও অধঃকৃত করিয়া তিনি তাঁহার চাদরের ভিতর হইতে কাপড়ে-মোড়া একটি দামি পুরাতন জামিয়ার বাহির করিলেন। রন্ধপ্রায় কণ্ঠে কহিলেন, “সময়টা কিছু খারাপ পড়িয়াছে, নগদ টাকা হাতে বেশি নাই— তাই মনে করিয়াছি, এই জামিয়ারটি তোমার কাছে বন্ধক রাখিয়া সেই পতুলটা কালীপদর জন্য লইয়া যাইব ।” |
|||
{{gap}}রাসমণি তীক্ষ্মভাবে মাথা নাড়িয়া কহিলেন, “তােমার কবিরাজ তাে সব জানে!” |
|||
জামিয়ারের চেয়ে অলপ দামের কোনো জিনিস যদি হইত তবে লগলাচরণের বাধিত না— কিন্তু সে জানিত, এটা হজম করিয়া উঠিতে পরিবে না—গ্রামের লোকেরা তো নিন্দা করিবেই, তাহার উপরে রাসমণির রসনা হইতে যাহা বাহির হইবে তাহা সরস হইবে না। জামিয়ারটাকে পুনরায় চাদরের মধ্যে গোপন করিয়া হতাশ হইয়া ভবানীচরণকে ফিরিতে হইল। |
|||
<br> |
|||
⚫ | |||
{{gap}}ভবানীচরণ কহিলেন, “আমি তাে বলি, রাত্রে আমার লুচি বন্ধ করিয়া ভাতের |
|||
প্রতিদিনই মুখে হাসি টানিয়া আনা দুঃসাধ্যতর হইতে লাগিল। আজ চতুথী । ভবানীচরণ অসময়ে অন্তঃপরে কী-একটা ছতা করিয়া গেলেন। যেন হঠাৎ কথাপ্রসঙ্গে রাসমণিকে বলিয়া উঠিলেন, "দেখো, আমি কয়দিন হইতে লক্ষ্য করিয়া দেখিয়াছি, কালীপদর শরীরটা যেন দিনে দিনে খারাপ হইয়া যাইতেছে।" |
|||
ব্যবস্থা করিয়া দিলে ভালাে হয়। উহাতে পেট ভার করে।” |
|||
⚫ | |||
<br> |
|||
& |
|||
{{gap}}রাসমণি কহিলেন, “পেট ভার করিয়া আজ পর্যন্ত তােমার তাে কোনাে অনিষ্ট |
|||
⚫ | |||
<br> |
|||
{{gap}}ভবানীচরণ সর্বপ্রকার ত্যাগস্বীকার করিতেই প্রস্তুত— কিন্তু, সে দিকে ভারি |
|||
কড়াক্কড়। ঘিয়ের দর বাড়িতেছে তবু লুচির সংখ্যা ঠিক সমানই আছে। মধ্যাহ্ন-ভােজনে পায়সটা যখন আছেই তখন দইটা না দিলে কোনাে ক্ষতিই হয় না— কিন্তু, |
|||
বাহুল্য হইলেও এ বাড়িতে বাবুরা বরাবর দই পায়স খাইয়া আসিয়াছেন। কোনােদিন ভবানীচরণের ভােগে সেই চিরন্তন দধির অনটন দেখিলে রাসমণি কিছুতেই তাহা |
|||
সহ্য করিতে পারেন না। অতএব গায়ে-হাওয়া-লাগানাে সেই মেমমূর্তিটি ভবানীচরণের |
|||
দই পায়স ঘি লুচির কোনাে ছিদ্রপথ দিয়া যে প্রবেশ করিবে এমন উপায় দেখা গেল না। |
|||
<br> |
|||
{{gap}}ভবানীচরণ তাঁহার গুরুপুত্রের বাসায় একদিন যেন নিতান্ত অকারণেই গেলেন |
|||
এবং বিস্তর অপ্রাসঙ্গিক কথার পর সেই মেমের খবরটা জিজ্ঞাসা করিলেন। তাঁহার |
|||
বর্তমান আর্থিক দুর্গতির কথা বগলাচরণের কাছে গােপন থাকিবার কোনাে কারণ |
|||
নাই তাহা তিনি জানেন; তবু আজ তাঁহার টাকা নাই বলিয়া ঐ একটা সামান্য |
|||
খেলনা তিনি তাঁহার ছেলের জন্য কিনিতে পারিতেছেন না, এ কথার আভাস দিতেও |
|||
তাঁহার যেন মাথা ছি‘ড়িয়া পড়িতে লাগিল। তবু দুঃসহ সংকোচকেও অধঃকৃত |
|||
করিয়া তিনি তাঁহার চাদরের ভিতর হইতে কাপড়ে-মােড়া একটি দামি পুরাতন |
|||
জামিয়ার বাহির করিলেন। রুদ্ধপ্রায় কণ্ঠে কহিলেন, “সময়টা কিছু খারাপ পড়িয়াছে, |
|||
নগদ টাকা হাতে বেশি নাই— তাই মনে করিয়াছি, এই জামিয়ারটি তােমার কাছে |
|||
বন্ধক রাখিয়া সেই পুতুলটা কালীপদর জন্য লইয়া যাইব।” |
|||
<br> |
|||
{{gap}}জামিয়ারের চেয়ে অল্প দামের কোনাে জিনিস যদি হইত তবে বগলাচরণের |
|||
বাধিত না— কিন্তু সে জানিত, এটা হজম করিয়া উঠিতে পারিবে না— গ্রামের লােকেরা |
|||
তাে নিন্দা করিবেই, তাহার উপরে রাসমণির রসনা হইতে যাহা বাহির হইবে তাহা |
|||
সরস হইবে না। জামিয়ারটাকে পুনরায় চাদরের মধ্যে গােপন করিয়া হতাশ হইয়া |
|||
ভবানীচরণকে ফিরিতে হইল। |
|||
<br> |
|||
⚫ | |||
<br> |
|||
{{gap}}ভবানীচরণ রােজই হাসিমুখে বলেন, “রােস্— এখনই কী। সপ্তমী পূজার দিন |
|||
আগে আসুক।” |
|||
<br> |
|||
{{gap}}প্রতিদিনই মুখে হাসি টানিয়া আনা দুঃসাধ্যতর হইতে লাগিল। |
|||
<br> |
|||
{{gap}}আজ চতুর্থী। ভবানীচরণ অসময়ে অন্তঃপুরে কী-একটা ছুতা করিয়া গেলেন। |
|||
যেন হঠাৎ কথাপ্রসঙ্গে রাসমণিকে বলিয়া উঠিলেন, “দেখাে, আমি কয়দিন হইতে |
|||
লক্ষ্য করিয়া দেখিয়াছি, কালীপদর শরীরটা যেন দিনে দিনে খারাপ হইয়া যাইতেছে।" |
|||
<br> |
|||
⚫ | |||
অসুখ দেখি না।” |
০৬:৩১, ১৩ জুন ২০১৯ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
রাসমণি বলিলেন, “প্রয়োজন নাই তাে কী।”
ভবানীচরণ কহিলেন, “কবিরাজ বলে, উহাতে পিত্তবৃদ্ধি হয়।”
রাসমণি তীক্ষ্মভাবে মাথা নাড়িয়া কহিলেন, “তােমার কবিরাজ তাে সব জানে!”
ভবানীচরণ কহিলেন, “আমি তাে বলি, রাত্রে আমার লুচি বন্ধ করিয়া ভাতের
ব্যবস্থা করিয়া দিলে ভালাে হয়। উহাতে পেট ভার করে।”
রাসমণি কহিলেন, “পেট ভার করিয়া আজ পর্যন্ত তােমার তাে কোনাে অনিষ্ট
হইতে দেখিলাম না। জন্মকাল হইতে লুচি খাইয়াই তাে তুমি মানুষ।”
ভবানীচরণ সর্বপ্রকার ত্যাগস্বীকার করিতেই প্রস্তুত— কিন্তু, সে দিকে ভারি
কড়াক্কড়। ঘিয়ের দর বাড়িতেছে তবু লুচির সংখ্যা ঠিক সমানই আছে। মধ্যাহ্ন-ভােজনে পায়সটা যখন আছেই তখন দইটা না দিলে কোনাে ক্ষতিই হয় না— কিন্তু,
বাহুল্য হইলেও এ বাড়িতে বাবুরা বরাবর দই পায়স খাইয়া আসিয়াছেন। কোনােদিন ভবানীচরণের ভােগে সেই চিরন্তন দধির অনটন দেখিলে রাসমণি কিছুতেই তাহা
সহ্য করিতে পারেন না। অতএব গায়ে-হাওয়া-লাগানাে সেই মেমমূর্তিটি ভবানীচরণের
দই পায়স ঘি লুচির কোনাে ছিদ্রপথ দিয়া যে প্রবেশ করিবে এমন উপায় দেখা গেল না।
ভবানীচরণ তাঁহার গুরুপুত্রের বাসায় একদিন যেন নিতান্ত অকারণেই গেলেন
এবং বিস্তর অপ্রাসঙ্গিক কথার পর সেই মেমের খবরটা জিজ্ঞাসা করিলেন। তাঁহার
বর্তমান আর্থিক দুর্গতির কথা বগলাচরণের কাছে গােপন থাকিবার কোনাে কারণ
নাই তাহা তিনি জানেন; তবু আজ তাঁহার টাকা নাই বলিয়া ঐ একটা সামান্য
খেলনা তিনি তাঁহার ছেলের জন্য কিনিতে পারিতেছেন না, এ কথার আভাস দিতেও
তাঁহার যেন মাথা ছি‘ড়িয়া পড়িতে লাগিল। তবু দুঃসহ সংকোচকেও অধঃকৃত
করিয়া তিনি তাঁহার চাদরের ভিতর হইতে কাপড়ে-মােড়া একটি দামি পুরাতন
জামিয়ার বাহির করিলেন। রুদ্ধপ্রায় কণ্ঠে কহিলেন, “সময়টা কিছু খারাপ পড়িয়াছে,
নগদ টাকা হাতে বেশি নাই— তাই মনে করিয়াছি, এই জামিয়ারটি তােমার কাছে
বন্ধক রাখিয়া সেই পুতুলটা কালীপদর জন্য লইয়া যাইব।”
জামিয়ারের চেয়ে অল্প দামের কোনাে জিনিস যদি হইত তবে বগলাচরণের
বাধিত না— কিন্তু সে জানিত, এটা হজম করিয়া উঠিতে পারিবে না— গ্রামের লােকেরা
তাে নিন্দা করিবেই, তাহার উপরে রাসমণির রসনা হইতে যাহা বাহির হইবে তাহা
সরস হইবে না। জামিয়ারটাকে পুনরায় চাদরের মধ্যে গােপন করিয়া হতাশ হইয়া
ভবানীচরণকে ফিরিতে হইল।
কালীপদ পিতাকে রােজ জিজ্ঞাসা করে, “বাবা, আমার সেই মেমের কী হইল।"
ভবানীচরণ রােজই হাসিমুখে বলেন, “রােস্— এখনই কী। সপ্তমী পূজার দিন
আগে আসুক।”
প্রতিদিনই মুখে হাসি টানিয়া আনা দুঃসাধ্যতর হইতে লাগিল।
আজ চতুর্থী। ভবানীচরণ অসময়ে অন্তঃপুরে কী-একটা ছুতা করিয়া গেলেন।
যেন হঠাৎ কথাপ্রসঙ্গে রাসমণিকে বলিয়া উঠিলেন, “দেখাে, আমি কয়দিন হইতে
লক্ষ্য করিয়া দেখিয়াছি, কালীপদর শরীরটা যেন দিনে দিনে খারাপ হইয়া যাইতেছে।"
রাসমণি কহিলেন, “বালাই! খারাপ হইতে যাইবে কেন। ওর তাে আমি কোনাে
অসুখ দেখি না।”