পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৩৩০: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিসংকলন থেকে
Nasirkhan (আলোচনা | অবদান)
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান)
Content fix.
পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
{{gap}}দিনাজপুর ও পাটনা ব্যতীত নদীয়া হইতে দেড় লক্ষ টাকা উৎকোচ লওয়া হইয়াছিল বলিয়া ওয়ারেন হেস্টিংস অভিযুক্ত হন। নদীয়ারাজের দানপত্রে সম্মতিদানের জন্য এইরূপ উৎকোচ দেওয়া হয় বলিয়া কথিত আছে।<ref>Debrett's Trial of W. H., Pt. III, p. 4.</ref> এ বিষয়ে আমরা পূর্বে উল্লেখ করিয়াছি যে, নদীয়াধিপতি মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র আপনার জ্যেষ্ঠপুত্র রাজা শিবচন্দ্রকে এক দানপত্র দ্বারা সমস্ত জমিদারী দিবার ইচ্ছা করিয়া অন্যান্য পুত্রের বৃত্তির বন্দোবস্ত করেন। তাহার কনিষ্ঠা রানীর গর্ভজাত রাজা শম্ভুচন্দ্র অর্ধাংশপ্রাপ্তির জন্য পিতার দানপত্রের বিরুদ্ধে গঙ্গাগােবিন্দের শরণাপন্ন হন। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র পূর্ব হইতে দেওয়ানজীর মনস্তুষ্টির চেষ্টা পাইতেছিলেন ; কিন্তু শম্ভুচন্দ্র গঙ্গাগোবিন্দকে পিতার বিরুদ্ধে নানারূপ কথা বলায়, তিনি রাজার উপর একান্ত অসন্তুষ্ট হন এবং গবর্নর জেনারেলকে রাজার দানপত্রে সম্মতি প্রদান না করিতে অনুরােধ করেন। পরে রাজার দেওয়ান কালীপ্রসাদ মুক্তার মালার দ্বারা হেস্টিংসপত্নীর মনােরঞ্জন করিয়া রাজার কার্য উদ্ধার করেন। কালীপ্রসাদ সে মালার মূল্য ৪০ হাজার মুদ্রামাত্র হেস্টিংসপত্নীর নিকট বলিয়াছিলেন।<ref>ক্ষিতিশবংশাবলীচরিত–সপ্তদশ অধ্যায়। </ref> পরে রাজার কার্যোদ্ধারের জন্য তাহাকে উপহার প্রদান করেন। উপরােক্ত ঘটনা দেশীয় প্রবাদ। কিন্তু প্রাচীন কাগজপত্রে সেই দানপত্রের সম্মতির জন্য দেড় লক্ষ টাকার উল্লেখ দেখা যায়। হয়ত, মতির মালা দেওয়ার পর, যখন হেস্টিংসসাহেব দানপত্রে সম্মতিদান করিতে স্বীকৃত হন, তখন কেবলই যে একগাছি মালায় তিনি সন্তুষ্ট হইয়াছিলেন, এমত বােধ হয় না। তিনি সুযােগ বুঝিয়া, শেষে হয়ত রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের নিকট হইতে দেড় লক্ষ টাকা লইয়া থাকিবেন। কিন্তু যদি দেশীয় প্রবাদ সত্য হয়, তাহা হইলে এ ক্ষেত্রে হেস্টিংস দেওয়ানজীর অনুরােধ রক্ষা না করিয়া, রাজার দানপত্রে সম্মতিদান করিয়াছিলেন।
{{gap}}দিনাজপুর ও পাটনা ব্যতীত নদীয়া হইতে দেড় লক্ষ টাকা উৎকোচ লওয়া হইয়াছিল বলিয়া ওয়ারেন হেস্টিংস অভিযুক্ত হন। নদীয়ারাজের দানপত্রে সম্মতিদানের জন্য এইরূপ উৎকোচ দেওয়া হয় বলিয়া কথিত আছে।<ref>Debrett's Trial of W. H., Pt. III, p. 4.</ref> এ বিষয়ে আমরা পূর্বে উল্লেখ করিয়াছি যে, নদীয়াধিপতি মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র আপনার জ্যেষ্ঠপুত্র রাজা শিবচন্দ্রকে এক দানপত্র দ্বারা সমস্ত জমিদারী দিবার ইচ্ছা করিয়া অন্যান্য পুত্রের বৃত্তির বন্দোবস্ত করেন। তাহার কনিষ্ঠা রানীর গর্ভজাত রাজা শম্ভুচন্দ্র অর্ধাংশপ্রাপ্তির জন্য পিতার দানপত্রের বিরুদ্ধে গঙ্গাগােবিন্দের শরণাপন্ন হন। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র পূর্ব হইতে দেওয়ানজীর মনস্তুষ্টির চেষ্টা পাইতেছিলেন; কিন্তু শম্ভুচন্দ্র গঙ্গাগোবিন্দকে পিতার বিরুদ্ধে নানারূপ কথা বলায়, তিনি রাজার উপর একান্ত অসন্তুষ্ট হন এবং গবর্নর জেনারেলকে রাজার দানপত্রে সম্মতি প্রদান না করিতে অনুরােধ করেন। পরে রাজার দেওয়ান কালীপ্রসাদ মুক্তার মালার দ্বারা হেস্টিংসপত্নীর মনােরঞ্জন করিয়া রাজার কার্য উদ্ধার করেন। কালীপ্রসাদ সে মালার মূল্য ৪০ হাজার মুদ্রামাত্র হেস্টিংসপত্নীর নিকট বলিয়াছিলেন।<ref>ক্ষিতিশবংশাবলীচরিত–সপ্তদশ অধ্যায়। </ref> পরে রাজার কার্যোদ্ধারের জন্য তাহাকে উপহার প্রদান করেন। উপরােক্ত ঘটনা দেশীয় প্রবাদ। কিন্তু প্রাচীন কাগজপত্রে সেই দানপত্রের সম্মতির জন্য দেড় লক্ষ টাকার উল্লেখ দেখা যায়। হয়ত, মতির মালা দেওয়ার পর, যখন হেস্টিংসসাহেব দানপত্রে সম্মতিদান করিতে স্বীকৃত হন, তখন কেবলই যে একগাছি মালায় তিনি সন্তুষ্ট হইয়াছিলেন, এমত বােধ হয় না। তিনি সুযােগ বুঝিয়া, শেষে হয়ত রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের নিকট হইতে দেড় লক্ষ টাকা লইয়া থাকিবেন। কিন্তু যদি দেশীয় প্রবাদ সত্য হয়, তাহা হইলে এ ক্ষেত্রে হেস্টিংস দেওয়ানজীর অনুরােধ রক্ষা না করিয়া, রাজার দানপত্রে সম্মতিদান করিয়াছিলেন।


{{gap}}হেস্টিংসের অনেকগুলি লােক উৎকোচ গ্রহণে নিযুক্ত থাকিত। যখন যাহার দ্বারা সুবিধা হইত, তখন হেস্টিংস তাহারই কথায় কর্ণপাত করিতেন; অনন্য আপত্তি করিলে সে কথা গ্রাহ্য করিতেন না। এক্ষেত্রে দেওয়ানজী তাহার আয়ের ব্যাঘাত জন্মাইতেছেন জানিয়া, তিনি তাহার অনুরােধ রক্ষা করেন নাই এবং মুক্তামালার ঘটনা যদি প্রকৃত হয়, তাহা হইলে স্বীয় প্রিয়তমা পত্নীর মনােরঞ্জন না করিয়া, তিনি কি প্রকারে অন্যের অনুরােধ রক্ষা করিতে পারেন ? যাঁহার রূপে মুগ্ধ হইয়া তিনি তাহার পূর্বস্বামীকে অর্থপ্রদান করিয়া বিবাহবন্ধন ছিন্ন করিয়া লন,<ref>হেস্টিংস ইমনুপ নামে একজন ইউরােপীয়কে অর্থ প্রদান করিয়া তাহার পত্নীকে নিজ পত্নীরূপে গ্রহণ করেন।</ref> এবং যাহার নিকট তিনি মনপ্রাণ বিক্রয় করিয়াছিলেন, তাহার অনুরােধ যে সর্বাগ্রে রক্ষণীয়
{{gap}}হেস্টিংসের অনেকগুলি লােক উৎকোচ গ্রহণে নিযুক্ত থাকিত। যখন যাহার দ্বারা সুবিধা হইত, তখন হেস্টিংস তাহারই কথায় কর্ণপাত করিতেন; অনন্য আপত্তি করিলে সে কথা গ্রাহ্য করিতেন না। এক্ষেত্রে দেওয়ানজী তাহার আয়ের ব্যাঘাত জন্মাইতেছেন জানিয়া, তিনি তাহার অনুরােধ রক্ষা করেন নাই এবং মুক্তামালার ঘটনা যদি প্রকৃত হয়, তাহা হইলে স্বীয় প্রিয়তমা পত্নীর মনােরঞ্জন না করিয়া, তিনি কি প্রকারে অন্যের অনুরােধ রক্ষা করিতে পারেন? যাঁহার রূপে মুগ্ধ হইয়া তিনি তাহার পূর্বস্বামীকে অর্থপ্রদান করিয়া বিবাহবন্ধন ছিন্ন করিয়া লন,<ref>হেস্টিংস ইমনুপ নামে একজন ইউরােপীয়কে অর্থ প্রদান করিয়া তাহার পত্নীকে নিজ পত্নীরূপে গ্রহণ করেন।</ref> এবং যাহার নিকট তিনি মনপ্রাণ বিক্রয় করিয়াছিলেন, তাহার অনুরােধ যে সর্বাগ্রে রক্ষণীয়

১৪:১৫, ৭ নভেম্বর ২০২০ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২৪
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী

 দিনাজপুর ও পাটনা ব্যতীত নদীয়া হইতে দেড় লক্ষ টাকা উৎকোচ লওয়া হইয়াছিল বলিয়া ওয়ারেন হেস্টিংস অভিযুক্ত হন। নদীয়ারাজের দানপত্রে সম্মতিদানের জন্য এইরূপ উৎকোচ দেওয়া হয় বলিয়া কথিত আছে।[১] এ বিষয়ে আমরা পূর্বে উল্লেখ করিয়াছি যে, নদীয়াধিপতি মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র আপনার জ্যেষ্ঠপুত্র রাজা শিবচন্দ্রকে এক দানপত্র দ্বারা সমস্ত জমিদারী দিবার ইচ্ছা করিয়া অন্যান্য পুত্রের বৃত্তির বন্দোবস্ত করেন। তাহার কনিষ্ঠা রানীর গর্ভজাত রাজা শম্ভুচন্দ্র অর্ধাংশপ্রাপ্তির জন্য পিতার দানপত্রের বিরুদ্ধে গঙ্গাগােবিন্দের শরণাপন্ন হন। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র পূর্ব হইতে দেওয়ানজীর মনস্তুষ্টির চেষ্টা পাইতেছিলেন; কিন্তু শম্ভুচন্দ্র গঙ্গাগোবিন্দকে পিতার বিরুদ্ধে নানারূপ কথা বলায়, তিনি রাজার উপর একান্ত অসন্তুষ্ট হন এবং গবর্নর জেনারেলকে রাজার দানপত্রে সম্মতি প্রদান না করিতে অনুরােধ করেন। পরে রাজার দেওয়ান কালীপ্রসাদ মুক্তার মালার দ্বারা হেস্টিংসপত্নীর মনােরঞ্জন করিয়া রাজার কার্য উদ্ধার করেন। কালীপ্রসাদ সে মালার মূল্য ৪০ হাজার মুদ্রামাত্র হেস্টিংসপত্নীর নিকট বলিয়াছিলেন।[২] পরে রাজার কার্যোদ্ধারের জন্য তাহাকে উপহার প্রদান করেন। উপরােক্ত ঘটনা দেশীয় প্রবাদ। কিন্তু প্রাচীন কাগজপত্রে সেই দানপত্রের সম্মতির জন্য দেড় লক্ষ টাকার উল্লেখ দেখা যায়। হয়ত, মতির মালা দেওয়ার পর, যখন হেস্টিংসসাহেব দানপত্রে সম্মতিদান করিতে স্বীকৃত হন, তখন কেবলই যে একগাছি মালায় তিনি সন্তুষ্ট হইয়াছিলেন, এমত বােধ হয় না। তিনি সুযােগ বুঝিয়া, শেষে হয়ত রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের নিকট হইতে দেড় লক্ষ টাকা লইয়া থাকিবেন। কিন্তু যদি দেশীয় প্রবাদ সত্য হয়, তাহা হইলে এ ক্ষেত্রে হেস্টিংস দেওয়ানজীর অনুরােধ রক্ষা না করিয়া, রাজার দানপত্রে সম্মতিদান করিয়াছিলেন।

 হেস্টিংসের অনেকগুলি লােক উৎকোচ গ্রহণে নিযুক্ত থাকিত। যখন যাহার দ্বারা সুবিধা হইত, তখন হেস্টিংস তাহারই কথায় কর্ণপাত করিতেন; অনন্য আপত্তি করিলে সে কথা গ্রাহ্য করিতেন না। এক্ষেত্রে দেওয়ানজী তাহার আয়ের ব্যাঘাত জন্মাইতেছেন জানিয়া, তিনি তাহার অনুরােধ রক্ষা করেন নাই এবং মুক্তামালার ঘটনা যদি প্রকৃত হয়, তাহা হইলে স্বীয় প্রিয়তমা পত্নীর মনােরঞ্জন না করিয়া, তিনি কি প্রকারে অন্যের অনুরােধ রক্ষা করিতে পারেন? যাঁহার রূপে মুগ্ধ হইয়া তিনি তাহার পূর্বস্বামীকে অর্থপ্রদান করিয়া বিবাহবন্ধন ছিন্ন করিয়া লন,[৩] এবং যাহার নিকট তিনি মনপ্রাণ বিক্রয় করিয়াছিলেন, তাহার অনুরােধ যে সর্বাগ্রে রক্ষণীয়

  1. Debrett's Trial of W. H., Pt. III, p. 4.
  2. ক্ষিতিশবংশাবলীচরিত–সপ্তদশ অধ্যায়।
  3. হেস্টিংস ইমনুপ নামে একজন ইউরােপীয়কে অর্থ প্রদান করিয়া তাহার পত্নীকে নিজ পত্নীরূপে গ্রহণ করেন।