পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৩৩৮: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিসংকলন থেকে
Nasirkhan (আলোচনা | অবদান)
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান)
Content fix.
পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
করেন। সেই জমাওয়াশীলপত্র হইতে জানা যায় যে, তৎকালে কোম্পানীর মােট জমা ১১,১৮,০১.৪০৮৫ ছিল ; কিন্তু সে কয় বৎসরে গড়ে ১০,০৯,২৬,৪১১১৫ আদায় হয়।<ref>Calcutta Review, 1874. Kandi Family.</ref> গঙ্গাগােবিন্দ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সময় বন্দোবস্তকার্যে কনওয়ালিসের অনেক সাহায্য করিয়াছিলেন। বঙ্গের রাজস্ববন্দোবস্তের সর্বপ্রধান কীতি হইতেও তিনি বিচ্ছিন্ন নহেন।
করেন। সেই জমাওয়াশীলপত্র হইতে জানা যায় যে, তৎকালে কোম্পানীর মােট জমা ১১,১৮,০১.৪০৮৫ ছিল; কিন্তু সে কয় বৎসরে গড়ে ১০,০৯,২৬,৪১১১৫ আদায় হয়।<ref>Calcutta Review, 1874. Kandi Family.</ref> গঙ্গাগােবিন্দ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সময় বন্দোবস্তকার্যে কনওয়ালিসের অনেক সাহায্য করিয়াছিলেন। বঙ্গের রাজস্ববন্দোবস্তের সর্বপ্রধান কীতি হইতেও তিনি বিচ্ছিন্ন নহেন।


{{gap}}উৎকোচগ্রহণ, জমিদারীলাভ প্রভৃতিতে অগাধ সম্পত্তির অধীশ্বর হইয়া, গঙ্গাগােবিন্দ অনেক সময়ে নিজ ঐশ্বর্যগর্বের পরিচয় দিয়াছিলেন। সেই সময়ের লােকদিগের এক চমৎকার প্রথা ছিল যে, জাল, জুয়াচুরি, প্রতারণা, প্রবঞ্চনা, বলপ্রয়ােগ প্রভৃতি গহিত উপায়ে অর্থ উপার্জন করিয়া তাহারা অনেক সদনুষ্ঠান করিতেন। সেই সমস্ত অর্থ দেবসেবা, ব্রাহ্মণসেবা ও অতিথিসেবায় ব্যয়িত হইত। এই সকল সদনুষ্ঠান যে কেবল সৎপ্রবৃত্তিজাত, তাহা বলিতে পারা যায় না; ইহাতে ঐশ্বর্যাভিমান বিমিশ্রিত থাকিত বলিয়া মনে হয়। তাহা না হইলে, অর্থোপার্জনের উপায় কদাচ এরূপ নিকৃষ্ট হইতে পারিত না। কিন্তু তাই বলিয়া এরূপ অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য যে কিয়ৎপরিমাণে উৎকৃষ্ট, তাহাও বলিতে হইবে। সেই অর্থ নৃত্যগীতাদি আমােদপ্রমােদে নষ্ট না করিয়া, দেশের উপকারে যদি ব্যয় করা হয়, তাহা হইলে, তাহাকে মন্দের ভাল বলা যাইতে পারে। কিন্তু যে সৎকার্যের মূলে মূতিমান পাপ বিরাজ করে, কদাচ তাহাকে প্রাণ খুলিয়া প্রশংসা করা যায় না। শৌচপ্রসঙ্গে মনু বলিয়াছেন যে, সর্বাপেক্ষা অর্থশৌচই শ্রেষ্ঠ অর্থাৎ অন্যায় পথ পরিত্যাগপূর্বক যে ব্যক্তি অর্থ উপার্জন করে, তাহাকেই প্রকৃত নির্মল বলা যায়। দুঃখের বিষয়, সে কালের অনেক ধনবাদিগের সদনুষ্ঠানে অর্থশোচ অতি অল্পপরিমাণে দৃষ্ট হইত।
{{gap}}উৎকোচগ্রহণ, জমিদারীলাভ প্রভৃতিতে অগাধ সম্পত্তির অধীশ্বর হইয়া, গঙ্গাগােবিন্দ অনেক সময়ে নিজ ঐশ্বর্যগর্বের পরিচয় দিয়াছিলেন। সেই সময়ের লােকদিগের এক চমৎকার প্রথা ছিল যে, জাল, জুয়াচুরি, প্রতারণা, প্রবঞ্চনা, বলপ্রয়ােগ প্রভৃতি গহিত উপায়ে অর্থ উপার্জন করিয়া তাঁহারা অনেক সদনুষ্ঠান করিতেন। সেই সমস্ত অর্থ দেবসেবা, ব্রাহ্মণসেবা ও অতিথিসেবায় ব্যয়িত হইত। এই সকল সদনুষ্ঠান যে কেবল সৎপ্রবৃত্তিজাত, তাহা বলিতে পারা যায় না; ইহাতে ঐশ্বর্যাভিমান বিমিশ্রিত থাকিত বলিয়া মনে হয়। তাহা না হইলে, অর্থোপার্জনের উপায় কদাচ এরূপ নিকৃষ্ট হইতে পারিত না। কিন্তু তাই বলিয়া এরূপ অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য যে কিয়ৎপরিমাণে উৎকৃষ্ট, তাহাও বলিতে হইবে। সেই অর্থ নৃত্যগীতাদি আমােদপ্রমােদে নষ্ট না করিয়া, দেশের উপকারে যদি ব্যয় করা হয়, তাহা হইলে, তাহাকে মন্দের ভাল বলা যাইতে পারে। কিন্তু যে সৎকার্যের মূলে মূতিমান পাপ বিরাজ করে, কদাচ তাহাকে প্রাণ খুলিয়া প্রশংসা করা যায় না। শৌচপ্রসঙ্গে মনু বলিয়াছেন যে, সর্বাপেক্ষা অর্থশৌচই শ্রেষ্ঠ অর্থাৎ অন্যায় পথ পরিত্যাগপূর্বক যে ব্যক্তি অর্থ উপার্জন করে, তাহাকেই প্রকৃত নির্মল বলা যায়। দুঃখের বিষয়, সে কালের অনেক ধনবাদিগের সদনুষ্ঠানে অর্থশোচ অতি অল্পপরিমাণে দৃষ্ট হইত।


{{gap}}গঙ্গাগােবিন্দ যে সমস্ত সৎকার্য করেন, তন্মধ্যে তাহার মাতৃশ্রাদ্ধ সর্বপ্রধান। কান্দীতেই এই সমারােহপূর্ণ কার্য সম্পন্ন হয়। কাশী, মিথিলা, নবদ্বীপ প্রভৃতি স্থানেই যাবতীয় পণ্ডিত শিষ্যগণসহ নিমন্ত্রিত হইয়া, শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে উপস্থিত হইয়াছিলেন। এইরূপ কথিত আছে যে, সেই সেই স্থানের প্রত্যেক চতুষ্পাঠী হইতেই পণ্ডিতগণ আগমন করেন। এতদ্ভিন্ন দেশের অন্যান্য ব্রাহ্মণগণও সমবেত হন। ভাট, ভিক্ষুকের সীমা পরিসীমা ছিল না। বাঙ্গলার প্রধান প্রধান জমিদার, রাজা, মহারাজগণ, উপস্থিত হইয়া শ্ৰাদ্ধসভার শােভাবর্ধন করিয়াছিলেন। নদীয়া, নাটোর, বর্ধমান, দিনাজপুর প্রভৃতি স্থানের রাজগণ এই বিরাট ব্যাপারে আগমন। করেন। সভাতে নদীয়ার ও নাটোরের ব্রাহ্মণরাজকে শ্রেষ্ঠ আসন দেওয়া হইয়াছিল ; তৎপরে বর্ধমান, দিনাজপুর, তাহার পর যশােহরের ও পাটুলীর মহাশয়দিগের আসন স্থাপন করা হয়। গঙ্গাগােবিন্দ এই শ্রাদ্ধের সময়, অল্পকাল স্থায়ী বৃহৎ বৃহৎ অনেক বাট নির্মাণ করিয়া, নিমন্ত্রিতগণের জন্য বাসস্থান নির্দেশ করিয়া দেন। শত শত মণ
{{gap}}গঙ্গাগােবিন্দ যে সমস্ত সৎকার্য করেন, তন্মধ্যে তাহার মাতৃশ্রাদ্ধ সর্বপ্রধান। কান্দীতেই এই সমারােহপূর্ণ কার্য সম্পন্ন হয়। কাশী, মিথিলা, নবদ্বীপ প্রভৃতি স্থানেই যাবতীয় পণ্ডিত শিষ্যগণসহ নিমন্ত্রিত হইয়া, শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে উপস্থিত হইয়াছিলেন। এইরূপ কথিত আছে যে, সেই সেই স্থানের প্রত্যেক চতুষ্পাঠী হইতেই পণ্ডিতগণ আগমন করেন। এতদ্ভিন্ন দেশের অন্যান্য ব্রাহ্মণগণও সমবেত হন। ভাট, ভিক্ষুকের সীমা পরিসীমা ছিল না। বাঙ্গলার প্রধান প্রধান জমিদার, রাজা, মহারাজগণ, উপস্থিত হইয়া শ্ৰাদ্ধসভার শােভাবর্ধন করিয়াছিলেন। নদীয়া, নাটোর, বর্ধমান, দিনাজপুর প্রভৃতি স্থানের রাজগণ এই বিরাট ব্যাপারে আগমন। করেন। সভাতে নদীয়ার ও নাটোরের ব্রাহ্মণরাজকে শ্রেষ্ঠ আসন দেওয়া হইয়াছিল; তৎপরে বর্ধমান, দিনাজপুর, তাহার পর যশােহরের ও পাটুলীর মহাশয়দিগের আসন স্থাপন করা হয়। গঙ্গাগােবিন্দ এই শ্রাদ্ধের সময়, অল্পকাল স্থায়ী বৃহৎ বৃহৎ অনেক বাট নির্মাণ করিয়া, নিমন্ত্রিতগণের জন্য বাসস্থান নির্দেশ করিয়া দেন। শত শত মণ

১৪:১৬, ৭ নভেম্বর ২০২০ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৩২
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী

করেন। সেই জমাওয়াশীলপত্র হইতে জানা যায় যে, তৎকালে কোম্পানীর মােট জমা ১১,১৮,০১.৪০৮৫ ছিল; কিন্তু সে কয় বৎসরে গড়ে ১০,০৯,২৬,৪১১১৫ আদায় হয়।[১] গঙ্গাগােবিন্দ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সময় বন্দোবস্তকার্যে কনওয়ালিসের অনেক সাহায্য করিয়াছিলেন। বঙ্গের রাজস্ববন্দোবস্তের সর্বপ্রধান কীতি হইতেও তিনি বিচ্ছিন্ন নহেন।

 উৎকোচগ্রহণ, জমিদারীলাভ প্রভৃতিতে অগাধ সম্পত্তির অধীশ্বর হইয়া, গঙ্গাগােবিন্দ অনেক সময়ে নিজ ঐশ্বর্যগর্বের পরিচয় দিয়াছিলেন। সেই সময়ের লােকদিগের এক চমৎকার প্রথা ছিল যে, জাল, জুয়াচুরি, প্রতারণা, প্রবঞ্চনা, বলপ্রয়ােগ প্রভৃতি গহিত উপায়ে অর্থ উপার্জন করিয়া তাঁহারা অনেক সদনুষ্ঠান করিতেন। সেই সমস্ত অর্থ দেবসেবা, ব্রাহ্মণসেবা ও অতিথিসেবায় ব্যয়িত হইত। এই সকল সদনুষ্ঠান যে কেবল সৎপ্রবৃত্তিজাত, তাহা বলিতে পারা যায় না; ইহাতে ঐশ্বর্যাভিমান বিমিশ্রিত থাকিত বলিয়া মনে হয়। তাহা না হইলে, অর্থোপার্জনের উপায় কদাচ এরূপ নিকৃষ্ট হইতে পারিত না। কিন্তু তাই বলিয়া এরূপ অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য যে কিয়ৎপরিমাণে উৎকৃষ্ট, তাহাও বলিতে হইবে। সেই অর্থ নৃত্যগীতাদি আমােদপ্রমােদে নষ্ট না করিয়া, দেশের উপকারে যদি ব্যয় করা হয়, তাহা হইলে, তাহাকে মন্দের ভাল বলা যাইতে পারে। কিন্তু যে সৎকার্যের মূলে মূতিমান পাপ বিরাজ করে, কদাচ তাহাকে প্রাণ খুলিয়া প্রশংসা করা যায় না। শৌচপ্রসঙ্গে মনু বলিয়াছেন যে, সর্বাপেক্ষা অর্থশৌচই শ্রেষ্ঠ অর্থাৎ অন্যায় পথ পরিত্যাগপূর্বক যে ব্যক্তি অর্থ উপার্জন করে, তাহাকেই প্রকৃত নির্মল বলা যায়। দুঃখের বিষয়, সে কালের অনেক ধনবাদিগের সদনুষ্ঠানে অর্থশোচ অতি অল্পপরিমাণে দৃষ্ট হইত।

 গঙ্গাগােবিন্দ যে সমস্ত সৎকার্য করেন, তন্মধ্যে তাহার মাতৃশ্রাদ্ধ সর্বপ্রধান। কান্দীতেই এই সমারােহপূর্ণ কার্য সম্পন্ন হয়। কাশী, মিথিলা, নবদ্বীপ প্রভৃতি স্থানেই যাবতীয় পণ্ডিত শিষ্যগণসহ নিমন্ত্রিত হইয়া, শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে উপস্থিত হইয়াছিলেন। এইরূপ কথিত আছে যে, সেই সেই স্থানের প্রত্যেক চতুষ্পাঠী হইতেই পণ্ডিতগণ আগমন করেন। এতদ্ভিন্ন দেশের অন্যান্য ব্রাহ্মণগণও সমবেত হন। ভাট, ভিক্ষুকের সীমা পরিসীমা ছিল না। বাঙ্গলার প্রধান প্রধান জমিদার, রাজা, মহারাজগণ, উপস্থিত হইয়া শ্ৰাদ্ধসভার শােভাবর্ধন করিয়াছিলেন। নদীয়া, নাটোর, বর্ধমান, দিনাজপুর প্রভৃতি স্থানের রাজগণ এই বিরাট ব্যাপারে আগমন। করেন। সভাতে নদীয়ার ও নাটোরের ব্রাহ্মণরাজকে শ্রেষ্ঠ আসন দেওয়া হইয়াছিল; তৎপরে বর্ধমান, দিনাজপুর, তাহার পর যশােহরের ও পাটুলীর মহাশয়দিগের আসন স্থাপন করা হয়। গঙ্গাগােবিন্দ এই শ্রাদ্ধের সময়, অল্পকাল স্থায়ী বৃহৎ বৃহৎ অনেক বাট নির্মাণ করিয়া, নিমন্ত্রিতগণের জন্য বাসস্থান নির্দেশ করিয়া দেন। শত শত মণ

  1. Calcutta Review, 1874. Kandi Family.