সুনির্মল বসুর শ্রেষ্ঠ কবিতা/আষাঢ়ের ভোর-রাতে
আষাঢ়ের ভোর-রাতে
আষাঢ়ের ভোর-রাতে ভেঙে গেল ঘুম,—
বাদল নূপুর শুনি, ঝুম্ ঝুম্ ঝুম্!
আধো-আলো আঁধিয়ারে
চেয়ে দেখি বারে বারে—
জল-ভরা বাদলের নাচনের ধুম;
জলের ঘুঙুর বাজে রুম্ ঝুম্ ঝুম্।
ঘন-ঘোর আষাঢ়ের প্রথম প্রকাশ,
থম্থমে আকাশের নব-উচ্ছ্বাস;
‘গুরু গুরু’—মাঝে মাঝে
মেঘের ডমরু বাজে,—
নেচে ফেরে ঝিরি ঝিরি বাদল-বাতাস,
থম্থমে আষাঢ়ের প্রথম প্রকাশ।
আবার আষাঢ় এলো স্নিগ্ধ মধুর,—
সারারাত ধারাপাত,—ঝুর্ ঝুর্ ঝুর্;
বাদলের গানে গানে
কত স্মৃতি টেনে আনে,—
সাড়া পেয়ে নেচে ওঠে মনের ময়ুর;
আবার আশার বাণী শোনায় মধুর।
হাততালি দিয়ে নাচে শাল-তালী-বন,
বনে বনে কানাকানি,—কত আলোড়ন;
ঝাপসা আলোর মাঝে
চোখে সব পড়ে না যে,
অনুভবে বুঝি আজি ভবের মাতন;
ঝাঁঝর বাজিয়ে নাচে খেজুরের বন।
ভেসে আসে জলে-ভেজা ফুলের সুবাস
জোনাকি ভিজিছে জলে, পাই যে আভাস;
নীড়-ভেজা যত পাখী
সুরু করে ডাকাডাকি,
চাতকের গান শুনি গভীর উদাস,
ভেসে আসে ভিজে সোঁদা মাটির সুবাস।
আষাঢ়ের ঘন-ঘোর বরষা ঘনায়,
বসে আছি নিরিবিলি ঘরের কোণায়;
ধীরে ধীরে দিকে দিকে
আঁধার হয়েছে ফিকে,—
পোহালো আষাঢ়-রাতি সজল শোভায়;—
জলছবি ভেসে ওঠে আলোর আভায়।