বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈশাখ মাতৃ-ঋণ సిa তাহার ? অহৰ্নিশি নিজের হৃদয়ের ভিতর যাহা সে শুনিতে পাইতেছে, বাহিরের ইন্দ্রিয়ের ভিতর দিয়া তাহ শুনিবার সৌভাগ্য কি তাহার হইবে না ? যামিনীকে সেই একবার মাত্র সে দেখিয়াছে, তাহাতেই তাহার মূৰ্ত্তি প্রতাপের জীবনের উপর এমন প্রভাব বিস্তার করিয়াছে ধ, স্বপ্নে, জাগরণে প্রতাপ কোনো সময়েই যামিনীর সম্বন্ধে অচেতন থাকে না । কোনো আশা তাহীর মনে রূপ পরিয়া উঠিতে সাহস করে না, কিন্তু আশা নাই হত। ভাবিবার সাহসও তাহার নাই । কেমন একটা সুমধুর তন্দ্র। তাছাকে ঘেরিয়া ধরিতেছিল । চোখের সম্মুখে নাই, তবু এই বাড়িতেই সে আছে। এই বাতাসে সেও নিঃশ্বাস লইতেছে, এই আলোকে তাহার দৃষ্টিও নিমজ্জিত হইয়াছে । আড়ালে থাকিয়া ও সে যে একান্তই নিকটে আছে । হঠাৎ বিদ্যুৎ-স্পৃষ্ঠের মত প্রতাপ শিহরিয়া উঠিল । একটা তীব্র চীৎকার তাহার কর্ণকুহরকে এবং হৃদয়কেও যেন বিদীর্ণ করিয়া মিলাইয় গেল। সঙ্গে সঙ্গে বাড়িময় সাড়া পড়িয়া গেল। মিহির খাবার ঘর হইতে ছুটিয়া বাহির হইয়া পড়িল, চাকর দুই জন দৌড়িয়া উপরে গেল। উপর হইতে হিন্দি বাংলা মেশান ভাষায় কোন একজন স্ত্রীলোক ক্রমাগত বিলাপ করিতে করিতে ছুটিয়া বেড়াইতেছে বোধ হইতে লাগিল। কি ব্যাপার ? প্রতাপ তাড়াতাড়ি বাহিরে আসিয়া দাড়াইল । সড়ির গোড়ায় মিহিরকে দেখিয়া সে কি জিজ্ঞাস করিতে গাইতেছে এমন সময় নক্ষত্ৰবেগে ছুটয় যামিনী তাহার সম্মুখে আসিয়া পড়িল । মিহিরের কাধ ধরিয়া একটা নাড়া দিয়া ভয়াত্ত কণ্ঠে চীৎকার করিয়া উঠিল, “ও থোকা, মায়ের কি হ’ল ? মা কি আর নেই?" মিহির ফ্যাল ফ্যাল করিয়া দিদির মুখের দিকে তাকাইয় বলিল, “কেন কি হয়েছে ?” যামিনী বলিল, “বাথরুমের সামনে কেমন ক’রে পড়ে আছেন, দেখ গিয়ে । ওমা গে, এ কি হ’ল ?” বলিয়াই সে কাদিয়া ফেলিল। একজন অপরিচিত যুবক সামনে দাড়াইয়া আছে, সে জ্ঞান আর তাহার তখন ছিল নী । כ\ל প্রতাপ দেখিল বাড়ির সকলেরই এমন অবস্থা যে কেহ কিছু করিয়া উঠিতে পারিবে না। গৃহস্বামী এখনও ঘণ্টদু’য়ের মধ্যে বাড়ি আসিবেন না । সে যখন উপস্থিত আছে তখন তাহার উচিত যথাসাধ্য সাহায্য করা । তাহার আচরণ হয়ত সাহেবী নিয়মানু্যায়ী হইবে না, কিন্তু সে কথা ভাবিবরি এখন সময় নাই । যামিনীকেই উদ্দেশ করিয়, তবে মিহিরের মুখের দিকে তাকাইয়া সে বলিল, “অত ব্যস্ত হয়ে লাভ কি ? আমি এখনই ডাক্তার নিয়ে আসছি। কাছেই একজন ভাল ডাক্তার আছেন । তোমার মাকে নাড়ানাড়ি করবার চেষ্ট৷ ক’রে না, যেখানে শুয়ে আছেন, তেমনি থাকুন।” প্রতাপের জীবনে এত অল্প সময়ে এতখানি পথ বোধ হয় সে কখনও অতিক্রম করে নাই । কপালগুণে ডাক্তারকে সে বাড়িতেই পাইল । ইহার সঙ্গে কস্মিনকালে তাহার আলাপ নাই । তাব যাওয়া-আসার পথে তাহার লাল রঙের বাড়িট। সৰ্ব্বদাই প্রতাপের চোথে পড়ে, তাহার ডিগ্রীর অক্ষরগুলি তাহার চোখের উপর নাচিয়া যায় । ডাক্তার ননী নীচের ঘরেই ছিলেন । প্রতাপের দারুণ ব্যস্তভাব দেখিয়া বলিলেন, “কি হয়েছে ? আপনি যে একেবারে হঁাপিয়ে পড়েছেন।” প্রতাপ যতটা জানে, ততটা বলিল। ডাক্তার আর দেরি না করিয়া যাইবার জন্ত উঠিলেন । তিনি বাহিরে যাইবার জন্য প্রস্তুত হইয়াই নীচে নামিয়াছিলেন, গাড়ী বাহিরে অপেক্ষা করিয়াই ছিল । কয়েক মিনিটের ভিতরই তাহার। নৃপেন্দ্রবাবুর বাড়ি আসিয়া পৌছিল। নীচের তলায় কেহ নাই ; সবাই বোধ হয় উপরে গিয়া ভীড় জমাইয়াছে। প্রতাপ ভাবিল, “এদের কাণ্ডই এক রকম। এদিকে ডাকাতি হয়ে গেলেও কেউ দেখবে না।” কিন্তু ডাক্তারকে লইয়া নীচে স্থা করিয়া দাড়াইয়া থাকা ত চলে না ? প্রতাপ তাহাকে লইয়া উপরেই চলিল । উত্তেজনার প্রাবল্যে তাহার পা কঁাপিতে লাগিল । এ যে দেবীমন্দিরে অনধিকারপ্রবেশ এত পুখ্যক তাহার নাই যে নিজের অধিকারে এড়র বে জলিজেঁ পারে। ۰٤ بو .*,. د