বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৮২২ S99áు তারপর আলো নিবাইয়া দরজার শিকল টানিয়া দিয়া আস্তে হৃষীকেশের মহলে আসিয়া ঢুকিলেন। হৃষীকেশ নড়িয়া বসিয়া চোখ হইতে চশমা নামাইয়৷ একটু ইতস্তত: করিয়া কহিলেন, "নরেন চিঠি লিখেছে ?” হেমবালা অস্ফুটম্বরে কছিলেন, “স্থা।” “কেমন আছে ?” “জানি না।” হৃষীকেশ আবার একটু নড়িয়া বসিলেন। হেমবালার এবারকার কলিকাতা আসাটা যে খুব স্বাভাবিক কারণে ঘটে নাই হৃষীকেশ গোড়াগুড়িই তাহা বুঝিতে পারিয়াছিলেন, হেমবালার ধরণধারণ দেখিয়া এতদুপরিও কিছু কিছু তিনি অনুমান করিয়াছিলেন, কিন্তু সমস্ত অবস্থাটা বেশ পরিষ্কারভাবে বুঝিবার সুযোগ র্তাহার হয় নাই। হেমবালা লুকাইতেই চাহিতেছেন বুঝিতে পারিয়া নিজে তিনি কিছুই জানিতে চাহেন নাই । কিন্তু যতটা বুঝিয়াছিলেন তাহাভেই ভগিনীকে খুব বেশী আগ্রহ সহকারে অভ্যর্থনা করিয়া লইতেও র্তাহার বাধিতেছিল, এবং এজন্য ষতবেশী বেদন! পাইতেছিলেন ততবেশী নিজেকে লইয়া তিনি সকলের হইতে দূরে থাকিতে চাহিতেছিলেন। হেমবালা নিজে তাহার ঘরে না আসিলে ভ্রাতাভগিনীতে ক্কচিং সাক্ষাং হইত। অবহু প্রতিদিন প্রভাতে হেমবালা স্বনিয়মে একবার করিয়া তাঁহাকে প্রণাম করিতে ও র্তাহার সংবাদ লইতে আসিতেন, তখন কিছুক্ষণ করিয়া নীরবে তাহার পায়ের কাছটিতে বসিয়! থাকিয়া যাইতেন, হৃষীকেশের পড়াশোনায় তাহাতে কিছুমাত্র ব্যাঘাত হইত না। আজ নিজেই নীরবতা ভঙ্গ করিয়া একটুখানি কাশিয়া তিনি কহিলেন, “নরেন সব-কিছুতেই ঐরকম । কোনো বিষয়ে গা করে না । জেনেশুনে যে অপরাধ করে তা মোটেই নয়, অন্তে অপরাধ নিতে পারে এই সহজ কথাটা কিছুতে তার মাথায় আসে না ।” হেমবালা কোনও কথা কহিলেন না, হৃষীকেশও কিছুক্ষণ নীরবেই স্নেহাবনত দৃষ্টিতে র্তাহাকে দেখিতে লাগিলেন । ভগিনী হইলেও হেমবালা র্তাহার কন্যা স্থানীয়, তাহার নিজের বয়স এখন ষাটের প্রায় কাছাকাছি, হেমবালার বয়স চল্লিশের বেশী হইবে না। পিতার মৃত্যুর পর কন্যাস্নেহেই ইহাকে তিনি লালন করিয়াছিলেন । তাহ ছাড়া সত্যই হেমবালাকে দেখিলে ঐন্দ্রিলার মা মনে হইত না । ঐন্দ্রিলার দিদি বলিয়াই লোকে ভুল করিত। কানের কাছটিতে একদিকে দু-একটি চলে পাক ধরান ভিন্ন বিগত যৌবন তাহার দেহ হইতে যৌবনীর আর-কিছুই লইয়া যাইতে পারে নাই । তাহার দিকে চাহিয়া সহজেই হৃষীকেশ মাঝখানকার কয়েকট বৎসরের ব্যবধানকে ভুলিয়া যাইতে লাগিলেন। বাৎসল্যরসে অভিষিক্ত সুদূর অতীতের অনেকগুলি দিন হঠাৎ আজ আবার স্মৃতিপথে ভিড় করিয়া আসিয়া তাহার দুই চোখকে বারস্বার অশ্রুসিক্ত করিয়া দিতে লাগিল । নিজেকে সম্বরণ করিয়া লইয়া কহিলেন, “তোমার বিয়ের বৎসর একবার বাপ-মাকে না ব’লেই তোমাকে নিতে এসে হাজির । আমি বললাম, ‘তুমি হেমকে নিতে এসেছ, কই, তোমার মা-বাবা ত সে-বিষয়ে কিছু লেখেননি।’ বললে, “আমি তাদের মন জানি, বউ বাড়ী গেলে তারা খুব খুশীই হবেন। আমি বললাম, তুমি ছেলেমানুষ, বুঝছ না, হেমকে নেবার প্রস্তাবটা তাদের কাছ থেকেই আসা দরকার । সে কিছুতেই বুঝল না, রাগ করে নাখেয়েদেয়েই চলে গেল । তারপর আমার বাড়ী আর বড় একট। সে আসেনি।” হেমবালা নতমস্তকে স্তব্ধ হইয়া রহিলেন । হৃষীকেশও ইহার পর অকস্মাং একসময় ঘুরিয়া বসিয়া কি একট। লেখার কাজে মনোনিবেশ করিলেন। বীণা আসিয়া ডাকিল, “পিসীমা, খাবে না ?” “ন, আমি এইথানেই দাদার কাছে একটু বসছি। মন্দিরার খাওয়া হয়ে গিয়ে থাকলে তাকে শুইয়ে দিতে আয়াকে বলগে যা। বিছানা করাই আছে।” “তা ত বলব, কিন্তু তুমি খাবে না কেন ?” “ক্ষিদে নেই মা, তুই যা।” বীণা অত্যস্তই বিস্মিত হইল, কিন্তু পিতা এবং পিতৃহসার মুখের দিকে চাহিয়৷ আর-কিছু বলিতে তাহার