করিল না, যাহা শূন্য তাহাই রূপে-রসে পূর্ণ হইয়া দেখা দিল। অদ্বৈতবাদ একটা তত্ত্বমাত্র না হইয়া, মানুষেরই মনুষ্যত্ব-মহিমার প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করিল—একটা জীবন্ত ধর্ম্ম-বিশ্বাসের উদ্দীপন-মন্ত্র হইয়া দাঁড়াইল। এই যে তত্ত্বের সঙ্গে ভাবের, সত্যের সঙ্গে জীবনের অপূর্ব্ব সমন্বয়—ভাবকে রূপময় করিয়া দেখা, ইহার মূলে ছিল সর্ব্বসংশয়ভঞ্জন তাঁহার গুরুর সেই প্রত্যক্ষ বাস্তব সাধন-মূর্ত্তি। তিনি কেবল বুঝিয়াই তৃপ্ত হন নাই, দেখিতে চাহিয়াছিলেন—সেই অপরোক্ষ দর্শনের সৌভাগ্য তাঁহার হইয়াছিল, তাই তিনি প্রাণের মধ্যে প্রেরণা লাভ করিয়াছিলেন, তাঁহার এক নূতন মন্ত্রদৃষ্টি লাভ হইয়াছিল; তাহা না হইলে নরেন্দ্রদত্ত বিবেকানন্দ হইতে পারিতেন না। সেই প্রত্যয়-বিশ্বাসের আনন্দে তিনি যে বাণী প্রচার করিলেন তাহাতে ভারতের ব্রহ্মবাদ বা বেদান্তদর্শনের কতখানি বিশুদ্ধি রক্ষা হইয়াছে, তাহার বিচার ভারতীয় দার্শনিক অথবা যোগী-সাধকেরা করিবেন। কিন্তু সে বাণী সম্পূর্ণ আধুনিক, তাহার মূলে বঙ্কিমচন্দ্রের ‘ধর্ম্মতত্ত্বে’র সাদৃশ্য আছে, মানুষের মোক্ষসাধনার সঙ্গে তাহার জীবন-ধর্ম্মের সামঞ্জস্য আছে; তাহার মতে, অনাসক্ত কর্ম্ম-যোগীর পক্ষেও মানব-মমতা স্বদেশ-প্রেমের ঐকান্তিক সাধনার আবশ্যকতা আছে। বিবেকানন্দের মনে মহাপুরুষের যে আদর্শ ছিল তাহাতে একাধারে শঙ্করের মত মনীষা ও বুদ্ধের মত হৃদয় থাকা চাই। ভারতের এই দুই যুগাবতারের প্রতি তাঁহার অপরিসীম শ্রদ্ধা ছিল, কিন্তু এই দুইজনের একটিকেও তিনি পূর্ণ আদর্শ বলিয়া গ্রহণ করেন নাই। বঙ্কিমচন্দ্রের আদর্শের যে পরিচয় তাঁহার ‘কৃষ্ণচরিত্রে’ ফুটিয়া উঠিয়াছে, তাহাতেও অনেকটা এই ধরনের আকাঙ্ক্ষা আছে। মানবত্বের এই
পাতা:বিবিধ কথা.djvu/২৪২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাঙালীর অদৃষ্ট
২২৯