বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিবিধ কথা.djvu/২৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩০
বিবিধ কথা

যে নূতন আদর্শ একই কালে দুই যুগন্ধর বাঙালীর চিত্তে স্থান পাইয়াছিল, ইহা হইতে আমরা বাঙালী জাতির গভীরতম প্রবৃত্তির পরিচয় পাই। উভয়ের মধ্যেই এই আদর্শ জাগিয়াছিল পাশ্চাত্য প্রভাবের ফলে, উভয়েই ইংরেজী জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রসূত নবভাবের সাধক—উভয়ের মধ্যেই যুগধর্ম্মের পূর্ণ প্রেরণায় সনাতন বাঙালিয়ানা এক নূতন রূপে ফুটিয়া উঠিয়াছিল। বঙ্কিমচন্দ্রের কল্পনা ও মনীষা ছিল বড়—তিনি ছিলেন নিছক ভাবুক ও কবি; বিবেকানন্দের প্রাণশক্তি বা প্রেম ছিল বড়— তিনি স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করিবার প্রয়াসী ছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্র চাহিয়াছিলেন হিন্দুর শিক্ষাদীক্ষা ও সাধনার ক্রমবিকাশকে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের অনুযায়ী একটি সুসঙ্গত ব্যাখ্যার দ্বারা উজ্জ্বল করিয়া তুলিতে; বিবেকানন্দ চাহিয়াছিলেন—হিন্দুসাধনার ইতিহাস যেমনই হউক, তাহার বীজ যে কালেই অঙ্কুরিত হউক এবং ইতিহাসিক জোয়ারভাঁটায় তাহা যত রূপেই বিবর্ত্তিত হউক—তাহার মূল মন্ত্রটিকে জাতির জীবনে ফলবান করিয়া তুলিতে। কোনও তত্ত্ব-জিজ্ঞাসায় নয়, ইতিহাস উদ্ধার করাও নয়, একটা বিশুদ্ধ ধর্ম্মমতের প্রতিষ্ঠাও নয়; তাঁহার প্রধান লক্ষ্য ছিল—জাতিকে, ধর্ম্মবিশ্বাসী নয়, আত্ম-বিশ্বাসী করিয়া তোলা। তিনি জানিতেন, তাহা হইলেই যথেষ্ট, কারণ ‘The soul may be trusted to the end’। এইজন্য রামমোহনের মত সংস্কার-প্রবৃত্তি থাকিলেও, পাছে জাতি নিজের প্রতি শ্রদ্ধা হারায়, এজন্য তাহার সকল অনুষ্ঠানের মধ্যে তাহার প্রাণের আকৃতির দিকটিকে তিনি শ্রদ্ধা করিয়াছিলেন—পূজা-পার্ব্বণ, ব্রত-উপবাস তীর্থযাত্রাদির মধ্যে যেখানে যেটুকু প্রাণের সত্য রহিয়াছে, সেখানে বুদ্ধিভেদ ঘটিতে দেন নাই। তত্ত্বের দ্বারা জীবনকে নিয়ন্ত্রিত না করিয়া, জীবনেরই মধ্য দিয়া সত্যকে