বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিবিধ কথা.djvu/২৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাঙালীর অদৃষ্ট
২৩১

উপলব্ধি করাইতে হইলে, জাতির বিশিষ্ট ভাবনা-সাধনা, মনোবৃত্তি ও হৃদয়-বৃত্তির উচ্ছেদ-সাধন চলিবে না; যাহা আছে তাহাকেই উপাদান ও উপায়স্বরূপে গ্রহণ করিয়া, তাহার মধ্য হইতে প্রাণের আলস্য ও জড়তা দূর করিয়া, এক নূতন ভাব-জীবনের স্পন্দন সৃষ্টি করাই, তাঁহার মতে এ জাতিকে উদ্ধার করার একমাত্র পন্থা। তাই এই নব-বেদান্তবাদী বাঙালী সন্ন্যাসী, ভারতীয় অদ্বৈতবাদকে মস্তিষ্ক হইতে হৃদয়ের মধ্যে নামাইয়া, জাতির সমস্ত কামনা-বাসনা ও কর্ম্মপ্রবৃত্তির মুলে নবশক্তি সঞ্চার করিতে চাহিয়াছিলেন। সে শক্তিমন্ত্র এইরূপ। আমি নিত্যমুক্ত, অপাপবিদ্ধ, আমি স্বাধীন, আমি অজেয়; অগ্নি যেমন পাবক—যাহা কিছু স্পর্শ করে তাহাকেই পবিত্র করিয়া তোলে—আমিও তেমনই; কোনও কর্ম্মে, কোনও অনুষ্ঠানে, কোনও নীতি-নিয়মের অনুবর্ত্তনে আমার অকল্যাণ হইতে পারে না; সত্য-মিথ্যা, সংস্কার-কুসংস্কার, একেশ্বরবাদ-বহুদেববাদ কিছুই আমাকে ধর্ম্মভ্রষ্ট করিতে পারিবে না, যদি আমার মধ্যে বীর্য্য, আত্ম-বিশ্বাস, স্বাধীনকর্ত্তৃত্ববোধ, ও ত্যাগের শক্তি থাকে—এক কথায় আত্মার দৈন্য না থাকে। এই বাণীর বীজমন্ত্র তিনি লাভ করিয়াছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণের নিকটে, তাহাকে প্রসারিত ও প্রচারিত করিবার ভার লইয়াছিলেন নিজে। একজন নিরক্ষর বাঙালীর অসামান্য প্রতিভায় যাহা ধরা পড়িয়াছিল—আর একজন ইংরেজীশিক্ষিত, পাশ্চাত্য প্রভাবে পূর্ণ-প্রভাবান্বিত বাঙালী হইল সেই মন্ত্রের আধার! যেন বাঙালী-জাতির মগ্ন চৈতন্যের মধ্যে যুগযুগান্তর ধরিয়া তাহার ভাবসাধনার যে মন্ত্রবীজটি সুপ্ত ছিল, পাশ্চাত্য প্রভাবের জল বায়ু তাহাকে অঙ্কুরিত করিয়া তুলিল।

 শ্রীরামকৃষ্ণের মধ্যেই কি স্বামী বিবেকানন্দ তাঁহার সেই আদর্শের