পাতা:বিশ্বকোষ ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/৩২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চিনি t সকল্পকলা আলু, গোল মালু প্রভৃতির পালো হইতেও চিনি প্রস্তুত হইয়াছে । সম্প্রতি কার্পাসের বীজ হইতে ইক্ষুজ চিনি হইতেও উৎকৃষ্ট চিনি প্রস্তুত হইতেছে। কাষ্ঠচুর্ণ ও ছিন্নবস্ত্র হইতেও নেপোলিয়ানের উদ্যমে চিনি প্রস্তুত হইয়াছিল । ইহার প্রক্রিয় অতিশয় কষ্ট সাধ্য । এই সকল হইতে যে চিনি হয়, রাসায়নিকের তাহা প্রধানতঃ চারি শ্রেণীতে বিভক্ত করিয়াছেন—ইক্ষুদ্র শর্করা, মধুজ শর্করা, ফলজ শকরা এবং দুগ্ধজ শর্করা। এই চারি প্রকার চিনির মধ্যে অস্বাদের বৈলক্ষণ্য আছে । ইক্ষুজ শর্করা অপেক্ষাকৃত রসনাপ্রিয়, অল্পায়াসলভ্য, সুতরাং বহু প্রচলিত। ইক্ষু, পালং মূল, খেজুর, সালগম প্রভৃতির রস হইতে যে চিনি উৎপন্ন হয় তাহাইস্কুজ শর্করা, মধু ও টাটুক। ফল হইতে উৎপন্ন চিনি মধুজ শকর, ফলের মগু, আঙ্গুর ও অন্তান্ত শুষ্ক পদার্থ হইতে উৎপন্ন চিনি ফলজ শকরা এবং জন্তুগণের দুগ্ধোৎপন্ন চিনি দুগ্ধজ শকব নামে অভিহিত । কেহ কেহ ঐ চারি প্রকারে বিভক্ত না করিয়া ইক্ষুজ ও ফলজ এই দুই প্রকার বিভাগ করিয়া থাকেন। খৃষ্টরাপীয় রাসায়নিক মতে—ইক্ষুজ চিনিতে অঙ্গার ১২, উদজন ১১ ও অন্নজন ১১ ভাগ ; মধুজ চিনিতে অ• ১২, উদ• ১২ ও অম্ল ১২ ভাগ, ফলজ চিনিতে অ’ ১২, উদ ১২, অম্ল ১২ ও জল ২ ভাগ এবং দুগ্ধজ চিনিতে অ’ ২৪, উদ- ২৪, ও অন্ত্র ২৪ ভাগ থাকে। যে চিনি ইক্ষুজ নামে খ্যাত, তাহ বণবিহীন, গন্ধশৃষ্ঠ, সুমিষ্ট আস্বাদযুক্ত, অল্প দৃঢ়, কিন্তু ক্ষণভঙ্গুর। সাধারণ পরিস্কৃত চিনির স্যায় শীঘ্র শীঘ্র দানা প্রস্তুত করিতে গেলে, দানাগুলি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হয়, কিন্তু অধিক উত্তাপে দ্রব করিয়া ধীরে ধীরে শীতল করিলে দানাগুলি মিছরির দ্যায় অপেক্ষাকৃত বড় হয় । ইহার আপেক্ষিক গুরুত্ব ১৬। অনাবৃত অবস্থায় রাখিলে ইহার কিছুমাত্র পরিবর্তন হয় না, উত্তপ্ত হইলে ইহার জলীয় অংশ নষ্ট হইয়া যায় মাত্র। এক তৃতীয়াংশ পরিমিত শীতল ও যে পরিমাণেরই হউক না কেন উত্তপ্ত জলে ইহা দ্রব হয় । সুরাসারেও ইহা দ্রব হইয়। থাকে, কিন্তু জলের মত নছে। ফারেনহিটের তাপমান যন্ত্রের ৩১ •• ডিগ্ৰী উষ্ণ হইলে চিনি অতি মসৃণ, বর্ণহীন, তরল পদার্থের মত হইয় পড়ে এবং ঐ তরল পদার্থ অকস্মাৎ শীতল হইলে অতিশয় স্বচ্ছ গোটা বাধিয়া থাকে, কিন্তু কিছু সময় রাখিয়া শীতল করিলে অস্বচ্ছ হইয়া যায়। বেশী উষ্ণ হইলে ইহার অঙ্গার ভিন্ন অপর অংশ ‘সকল বাষ্পাকারে উড়িয়া যায় । দুইথগু গোট বান্ধ চিনি ( মিছর ) অন্ধকারে পরস্পর সংঘর্ষিত হইলে আলোক উৎপন্ন হয়। ইক্ষুজ চিনি পুষ্টিকর, ইহাতে খাদ্য দ্রব্যাদিও ৩২৪ ] • छिनिं ষেরূপ সুমিষ্ট হইয়া থাকে, অপর কোন প্রকার চিমিতে সেরূপ হয় না । প্রস্রাবের দোষ নিবারণ করিবার স্বতগুলি উপায় উত্তাবিত হইয়াছে, ফলজ চিনি তাহার অন্ততম উপায় । বহুমূত্র ব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তির প্রস্রাবের সহিত উক্ত প্রকার চিনি বাহির হয় । সুতরাং ঐ সময়ে ফলজ চিলি ব্যবহার করিলে উপকার হইয়া থাকে ফারণহিটের ১৪ •• ডিগ্ৰী উষ্ণ করিলে ইহা নরম হইয়া যায় এবং ২১২ ডিগ্ৰী উষ্ণতায় দ্রব হয়, কিন্তু তদপেক্ষ উষ্ণতর হইলে ইহা ক্ষারে (Caramel) পরিণত হয় । ইক্ষুজ চিনি জলে যত শীঘ্র দ্রব হয়, এ প্রকার চিনি তত শীজ দ্রব হয়না এবং দ্রব হইলে উহা জবাবস্তুর ইক্ষু চিনির ন্যায় নিৰ্ম্মল ও সুমিষ্ট থাকেন । উত্তপ্ত সুরাসারে ইহা দ্রব হয় । কিন্তু অল্পমাত্র শীতল হইলেই পুনরায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দানা বাধিয়। যায় । মধুজ চিনি তীক্ষ সুরাসারে তরল হয়। দুগ্ধজ শকরা সচরাচর বর্ণহীন । ইহা প্রায় ছয় গুণ শীতল অথবা আড়াই গুণ উঞ্চজলে দ্রব হয় । ইহার অস্বাদ তেমন সুমিষ্ট নহে, ইহা বায়ুতে অনাবৃত থাকিলে পরিবর্তিত কিম্ব। সুরাসারে দ্রবীভূত হয়না। অমের সহিত মিশাইয়া উত্তপ্ত করিলে তাহ ধীরে ধীরে ফলজ চিনিতে পরিণত হয় । জন্তুগণের দুগ্ধ ছিড়িয়া গেলে তাহার জল ফুটাইয় তাহ দানাকারে পরিণত হইলে যে চিনি হয়, তাহাকে দুগ্ধজ চিনি বলে । উপরি লিখিত চারি প্রকার চিনি ভিন্ন আরও কয় প্রকার চিনি নবাবিষ্কৃত হইয়াছে, কিন্তু সে সমস্ত চিনিই ইক্ষুজ চিনির দ্যায় । অতি অল্প দিন হইল কয়লা-মধ্যে চিনির অস্তিত্ব উদ্ভাবন হইয়াছে। কোন কোন রাসায়নিক বলিতেছেন তাহা অপেক্ষা বেশী মিষ্টত। আর কোন দ্রব্যে নাই । খেজুর গাছের নির্যাস হইতে প্রতিবৎসর বহু পরিমাণে গুড়, চিনি ইত্যাদি উৎপন্ন হইয়া থাকে। বাঙ্গালার সকল স্থানেই খেজুর রস সংগৃহীত ও তাহ হইতে গুড় প্রস্তুত হয়, তন্মধ্যে যশোর, বরিশাল ও ফরিদপুর জেলাতেই সৰ্ব্বাপেক্ষ অধিক । খেজুর গাছ ৫৭ বৎসরের হইলে পর তাহার শিরোভাগে শাখার নিম্নে একদিক চাচিয়া ফেলে। ত্বক ছোলা হইলে পর ঐ সমস্ত স্থানের রস একস্থানে গড়াইয়া পড়িতে পারে, এরূপ করিয়া আলি কাটিয়া দেয়। স্কুইদিক হইতে ছুইটী আলি গিয়া মধ্যস্থলে মিলিত হয়। পরে ঐস্থানে একখণ্ড বঁাশের পাতি কিম্ব টিনের ফলক রাখে । ঐ পাতির নিয়ে রস সংগ্ৰহ করিবার জন্য একটা ছাড়ি বাধিয়া দেয়। বৈকালে এইরূপ করিয়া রাখিলে সমস্ত রাত্রি ঐ স্থান হইতে রস নির্গত হইয়া ভাওে সঞ্চিত হয়। প্রত্যুষে অধিকারী আসিয়া রসপুর্ণ ভাও