তিনি বাল্যকালেই পিতৃহীন হন এবং মাতুলের তত্ত্বাবধানে লালিত-পালিত হন। অল্প বয়সেই তিনি নাট্যকলা এবং অভিনয়ের দিকে আকৃষ্ট হন। তিনি ১৮৯২ খ্রীষ্টাব্দে কিছুকালের জন্য এমারেল্ড থিয়েটারের সহিত যুক্ত হন। ১৯০৬ খ্রীষ্টাব্দ হইতে তিনি নিয়মিত নাটক লিখিতে থাকেন এবং জীবনের শেষকাল পর্যন্ত প্রায় ৪ •খানি নাটক লেখেন। এই নাটকগুলির মধ্যে ‘নন্দবিদায়’ ( ১৮৮৮ খ্রী), ‘লুলিয়া’ ( ১৯০৭ খ্রী), “ঠিকে ভুল’ (১৯১০ খ্র) বিশেষ উল্লেখযােগ্য। অপেরাধর্মী নাটক রচনায় এবং বিশেষ করিয়া দ্বৈতসংগীত রচনায় অতুলকৃষ্ণ সিদ্ধহস্ত ছিলেন।
অতুলচন্দ্র গুপ্ত (১৮৮৪-১৯৬১ খ্ৰী ) রংপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁহার পিতা উমেশচন্দ্র গুপ্ত ওকালতি ব্যবসায় উপলক্ষে আদি নিবাস ময়মনসিংহের অন্তর্গত টাঙ্গাইল হইতে রংপুরে আসিয়া বসবাস করিতে থাকেন। প্রবেশিকা পরীক্ষা পর্যন্ত অতুলচন্দ্র রংপুর জিলা স্কুলেই পড়াশুনা করেন। অতঃপর কলিকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজ হইতে ইংরেজী ও দর্শন বিষয়ে অনার্স লইয়া তিনি বি. এ. পাশ করেন। তিনি ইংরেজীতে দ্বিতীয় শ্রেণী এবং দর্শনে প্রথম শ্রেণীর অনার্স পাইয়াছিলেন। ১৯০৬ খ্রীষ্টাব্দে অতুলচন্দ্র দর্শন বিষয়ে প্রথম শ্রেণীতে এম. এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়াছিলেন। ইহার এক বৎসর পরে প্রেসিডেন্সি কলেজ হইতেই তিনি আইন পরীক্ষায় পাশ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সমাপ্ত করিয়া অতুলচন্দ্র রংপুরেই আইন ব্যবসায় করিতে থাকেন। ১৯১৪ খ্রীষ্টাব্দে তিনি কলিকাতা হাইকোর্টে যােগ দেন। সেই সঙ্গে ১৯১৮-২০ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে রােমান ল এবং জুরিসপ্রুডেন্স -এর অধ্যাপক নিযুক্ত হন। প্রায় দশ বৎসর পর অধ্যাপনা ছাড়িয়া তিনি আইন ব্যবসায়ে সম্পূর্ণ আত্মনিয়ােগ করেন এবং বিপুল সাফল্য লাভ করেন।
অতুলচন্দ্র বিভিন্নমুখী মনীষার অধিকারী ছিলেন। রংপুরে তাহার শিক্ষক স্থানীয় দেশকর্মী নগেন্দ্রনাথ সেনের প্রভাবে বাল্যকাল হইতেই তাহার মনে গভীর দেশাত্মবােধের বীজ অঙ্কুরিত হয়। পরে সারা জীবনই তিনি নানা রাজনৈতিক সংগঠন ও আন্দোলনের সহিত যুক্ত ছিলেন। ১৯০৫ খ্রীষ্টাব্দে যখন অতুলচন্দ্র এম. এ. ক্লাসের ছাত্র তখন তিনি কুখ্যাত কার্লাইল সার্কলারের প্রতিবাদেএতদ্ব্যতীত ‘পত্রাবলীধর্ম ও বিজ্ঞান’ নামে আর একখানি গ্রন্থ দিলীপকুমার রায়, বীরবল এবং অতুলচন্দ্র গুপ্তের যুক্তনামে প্রকাশিত হয়। এখানে উল্লেখযােগ্য, ১৯১৮ খ্রীষ্টাব্দে ‘ট্রেডিং উইথ দি এনিমি’ (Trading with the Enemy) নামে একটি গবেষণা নিবন্ধ রচনা করিয়া তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হইতে ‘অনথনাথ দেব পুরস্কার লাভ করেন। পরে এই বিশ্ববিদ্যালয় তাহাকে ডি. এল, উপাধিতে ভূষিত করেন (১৯৫৭ খ্রী)। অতুলচন্দ্রের রচনার পরিমাণ অপেক্ষাকৃত স্বল্প হইলেও বৈদগ্ধ্য ও দুর্লভ অন্তদৃষ্টির সমন্বয়ে বাংলা মনন-সাহিত্যের উৎকৃষ্ট সম্পদ বলিয়া সেইগুলি সমাদৃত।