বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:জোড়াসাঁকোর ধারে.djvu/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
জোড়াসাঁকোর ধারে

কুঁজোর মুখের গোল রেখাটি যখন টানি। মন একেবারে কুঁজোর ভিতরে কুয়োর তলায় ব্যাঙের মতে টুপ করে ডুব দিতে চায়। আর সেই কাচের আলমারির স্টীম জাহাজ—তাতে চড়ে বসে মন কাপ্তেন হয়ে যেতে চায় সাত সমুদ্দর তেরো নদীর পার। কি খেলার জাহাজই ছিল সেটি—পালমাস্তুল, দড়িদড়া, যেখানকার যা হুবহু আসল জাহাজের মতো।

 ভুলু আমায় প্রায়ই বলে, ‘ভালো করে লেখাপড়া কর্‌—দেখবি এই জাহাজটিই তুই প্রাইজ পেয়ে যাবি। কিন্তু লেখাপড়ায়ই যে মন বসে না আমার, তা প্রাইজ পাবো কোত্থেকে? কোনো আশা নেই জানি, তবুও লোভ হয় মনে এক-আধটা প্রাইজ পেতে। কিন্তু কোনোবার কোনো কিছুরই জন্য প্রাইজ আর পেলেম না নর্ম্যাল স্কুলে।

 একবার প্রাইজ বিতরণের সময় এল, ইস্কুলে ছিল একটা মস্ত বড় ঘর আগাগোড়া গ্যালারি সাজানো। এক পাশে আছে খানকয়েক চেয়ার ও একটা টেবিল। রোজ ক্লাস আরম্ভ হবার আগে ছোট বড় সব ছেলেরা সেই ঘরে জড়ো হই। রেজিস্টার খুলে মাস্টার একে একে নাম হাঁকেন; আমরা বলি, ‘প্রেজেণ্ট স্যার, অ্যাবসেণ্ট স্যার।’ নাম ডাকা সারা হলে শুরু হয় ড্রিল। গ্যালারিতে বসে ছিলুম, উঠে দাঁড়াই এবার। মাস্টার হেঁকে চলেন, ‘দক্ষিণ হস্ত উত্তোলন, বাম হস্ত উত্তোলন, অঙ্গুলি সঞ্চালন। অমনি আমাদের পাঁচ পাঁচ দশটা অঙ্গুলি থর থর করে কাঁপতে থাকে যেন কচি কচি আমপাতা নড়ছে হাওয়াতে। তারপর পদক্ষেপ; ডান পা বাঁ পা তুলে বেঞ্চিতে খুব খানিকটে ধুপ ধাপ ঠুকে যার যার ক্লাসে যাই।

 সেই বড় ঘর সাজানো হয়েছে প্রাইজ বিতরণের দিনে, টেবিলের উপরে লাল ফিতেয় বাঁধা গাদা গাদা চটি মোটা সোনালি রুপোলি নানা রঙের বই। সামনে এক সারি চেয়ার—বিশিষ্ট লোকেরা বসবেন তাতে। আমরাও সকলে হাজির গ্যালারিতে অনেক আগে থেকেই। প্রাইজ বিতরণের আগে জিতেন বাঁড়ুজ্জে কুস্তি দেখালেন—লোহার শিকল ছিঁড়লেন, লোহার বড় বড় বল ছুঁড়ে ছুঁড়ে লুফে নিলেন। মস্ত পালোয়ান তিনি।

 এবার প্রাইজ বিতরণ হবে। গোপালবাবু হেডমাস্টার, টাকমাথা, ঘাড়ের কাছে একটু একটু চুল, অনেকটা এই এখনকার আমার মতোই; তবে রঙ তাঁর আরো পরিষ্কার। গম্ভীর মানুষ; কামিয়ে জুমিয়ে ফিটফাট হয়ে গলায় চাদর ঝুলিয়ে এসে বসলেন চেয়ারে। ছেলেরা কেউ বুঝুক ন-বুঝুক এই সব উপলক্ষে