পাতা:বিবিধ কথা.djvu/৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অতি-আধুনিক সমালোচক ও বঙ্কিমচন্দ্র
৪৯

অনুগত করিয়া, বাস্তব-জ্ঞানে প্রতিষ্ঠিত করিবার অধিকারও কবিরই আছে। সেই যাদুশক্তিকেই কবিপ্রতিভা বলে।

 পূর্ব্বে বলিয়াছি, তত্ত্বের দিক দিয়া যেমন, তেমনই কাব্যরসের দিক দিয়াও বাস্তব বলিয়া কিছু নাই, কারণ, ‘বাস্তব’ একটা ব্যবহারিক প্রাকৃত সংস্কার মাত্র। বস্তুকে কেহ দেখে নাই; সেই জন্য কাব্যসাহিত্যও বাস্তবতার দাবি করে না—বরং বস্তুর অন্তরালে যে পরম রহস্যময় সত্তা আছে তাহারই রূপ, নানা ইঙ্গিতে ও ভঙ্গিতে আমাদের রসচেতনার গোচর করিতে চায়—জ্ঞানচেতনার নহে। এই জন্যই প্রত্যেক রসসৃষ্টি মৌলিক ও স্বতন্ত্র, প্রত্যেকটির একটা নিজস্ব ভাব-সঙ্গতি আছে—সেই সঙ্গতিই তাহার বাস্তবতার প্রাণ। এই সঙ্গতি-রক্ষা যদি কোনও কাব্যে না হইয়া থাকে, তবে কবি-প্রেরণা সত্য ও সার্থক হয় নাই বুঝিতে হইবে। আধুনিক সাহিত্যে যে বাস্তবতার জয়ঘোষণা হইয়া থাকে, তাহা রস-বস্তুর বাস্তবতা নয়—উপাদানের বাস্তবতা মাত্র। সেই বাস্তবতার বিরুদ্ধে রসিকের কোনও নালিশ নাই; কিন্তু সেই সকল রচনা যদি সার্থক রসসৃষ্টির দাবি করে, তবে সেই উপাদানবস্তু সত্ত্বেও তাহাকে রস-পদবীতে উত্তীর্ণ হইতে হইবে, নতুবা বাস্তবতার দোহাই দিয়াই তাহা কাব্যপদবাচ্য হইবে না। অতএব কবি-কল্পনার আশ্রয় যাহাই হউক, সেই উপাদান-বৈচিত্র্য রসরূপেরই বৈচিত্র্য বিধান করে—কেবল বাস্তবতার দাবিতেই কোনও রচনা উৎকৃষ্ট রসসৃষ্টি বলিয়া গণ্য হইতে পারে না। জীবনের এমন কোনও দিক নাই—এমন কোনও বিষয় নাই, যাহা কবিকল্পনার অধিগম্য নহে। সকল কাব্যসৃষ্টির মত উপন্যাসেও বাস্তব-অবাস্তব ভেদ নাই—জীবন ও জগতের একটা রসরূপ উদ্ভাবন করাই তাহার মূলীভূত প্রেরণা। বরং,