পাতা:বিবিধ কথা.djvu/১০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আচার্য্য কেশবচন্দ্র ও বাংলার নবযুগ
৯৩

মধ্যে বাঙালী-প্রতিভার আর এক দিক নবযুগের সমস্যায় সাড়া দিয়াছিল। কেশব যুক্তিবাদী নহেন, ভক্তিবাদী; কেশব যে শক্তিবলে যুগ-সঙ্কট উত্তীর্ণ হইতে চাহিলেন, সে শক্তি আত্মিক বিশ্বাসের শক্তি, তাই কেশব রামমোহনের মত নীতিবাদী নহেন—নীতিধর্ম্মী; তিনি ধর্ম্ম-প্রণেতা নহেন—ধর্ম্ম-প্রচারক। তথাপি কেশব ও রামমোহনের লক্ষ্য এক—জাতির নৈতিক জীবনের সংস্কার-সাধন। রামমোহন যাহা বুদ্ধির সাহায্যে করাইতে চাহিয়াছিলেন, কেশব তাহাই করাইতে চাহিয়াছিলেন ধর্ম্ম-বিশ্বাসের বলে। রামমোহন খ্রীষ্টান ধর্ম্মনীতির শ্রেষ্ঠতা স্বীকার করিলেও, এবং সেমীয় একেশ্বরবাদের পক্ষপাতী হইলেও, তাঁহার ব্রাহ্মণ্য আভিজাত্য-সংস্কার ত্যাগ করিতে পারেন নাই—বেদান্ত উপনিষদের দোহাই না দিয়া পারেন নাই। এইখানেই তাঁহার ‘ভাবের ঘরে চুরি’ ছিল; তিনি ভিতরে যাহা বুঝিয়াছিলেন, বাহিরে তাহা খোলাখুলি স্বীকার করিতে রাজি ছিলেন না। এই আভিজাত্যাভিমানের বশেই—নিজধর্ম্মের পরিবর্ত্তে তিনি যে পরধর্ম্মের প্রতি আকৃষ্ট হইয়াছিলেন, তাহার প্রভাব স্বীকার না করিয়া, তিনি অতি প্রাচীন শাস্ত্র হইতে স্বপক্ষে প্রমাণ সংগ্রহ করিয়াছিলেন। কেশব এই আবরণটি উড়াইয়া দিলেন, নিজ ধর্ম্মবিশ্বাস অকপটে স্বীকার করিলেন। কেশব বিদ্রোহী নব্যবঙ্গের এক অভিনব মূর্ত্তি। কেশবের ধর্ম্ম-প্রতিভা ছিল, তাঁহার সমস্ত হৃদয়মন ভক্তির ভাবাবেশে ঝঙ্কৃত হইয়া উঠিত—সে সময়ে তাঁহার মুখে দিব্যপ্রভা ও কণ্ঠে দিব্যভারতীর উদয় হইত। পাশ্চাত্য যুক্তিবাদ যেমন রামমোহনের প্রতিভাকে স্ফুরিত করিয়াছিল, পাশ্চাত্য ধর্ম্মও তেমনই কেশবকে সঞ্জীবিত করিয়াছিল। এই দুই অগ্নি-পরীক্ষাই বাঙালীকে উত্তীর্ণ হইতে হইয়াছে; কেশবের প্রতিভা খাঁটি বাঙালীর প্রতিভা,