পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত ১২৩ —তবে চাষার ছেলে ভিন্ন কোনও শিক্ষিত লোক কখনও ওসবে যাবে না ?...কারণ ইট্‌ ইজ নট ব্রেড, ইন্‌ হিজ বোন ? অদ্ভুত কথা আপনার—আমার সঙ্গে কেন্থি জে একজন আইরিশ ছাত্র পড়ত—লম্বা লম্বা চুল মাথায়, মুন্দর চেহারা, ধরণধারণে উ, পোরেট। হয়ত সারারাত জেগে হল্লা করছে, একটা বেহালা নিয়ে বাজাচ্ছে—আবার হয়ত দেখুন সারাদিন পড়ছে, ব’সে কি লিখছে—নয় তো ভাবছে—ডিগ্ৰী নিয়ে চলে গেল বেরিয়ে ক্যানাডায়— গবর্ণমেণ্ট হোমন্টেড, ল্যাণ্ডে জংলী জমি নিলে—ছোট্ট একটা কাঠের কুঁড়েঘরে সেই দুধর্ষ শীতের মধ্যে তিন-চার বৎসর কাটালে—হোমস্টেড, ল্যাণ্ডের নিয়ম হচ্ছে টাইট্‌ল হবার আগে পাঁচ বৎসর জমির ওপর বাস করা চাই—থেকে জমি পরিষ্কার করলে, নিজের হাতে রোজ জমি সাফ করে—লোকজন নেই, দুশে একর জমি, ভাবুন কতদিনে— ওদিকে একদলের মধ্যে আলোচনা বেশ ঘনাইয়া আসিল। একজন কে বলিয়া উঠিল— ওসব মর্যালিটী, আপনি যা বলছেন, সেকেলে হয়ে পড়েছে—এটা তো মানেন যে, ওসব তৈরি হয়েছে বিশেষ কোনও সামাজিক অবস্থায়, সমাজকে বা ইনডিভিডুয়ালকে প্রোটেকৃশান দেবার জন্তে, সুতরাং— —বটে, তাহলে সবাই সুবিধাবাদী আপনারা। নর্মাটিভ ভ্যালু বলে কোনও কিছুর স্থান নেই দুনিয়ায় ?...ধরুন যদি— অপু খুব খুশী হইল। কলিকাতার বড়লোকের বাড়ির পার্টতে সে নিমন্ত্রিত হইয়া আসিয়াছে, তাহা ছাড়া শিক্ষিত বিলাত-ফেরত দলের মধ্যে এভাবে । নাটক-নভেলে পড়িয়াছিল বটে, কিন্তু জীবনের অভিজ্ঞতা কখনও হয় নাই। সে অতীব খুশীর সহিত চারিধারে চাহিয়া একবার দেখিল—মার্বেলের বড় ইলেক্‌টিক ল্যাম্প কড়ি হইতে ঝুলিতেছে, মুনার ফুলকটি ছিটের কাপড়ে ঢাকা কোঁচ, সোফা, দামী আয়না—বড় বড় গোলাপ, মোরাদবাদের পিতলের গোলাপদানী । নিজের বসিবার কোঁচখানা দে দু-একবার অপরের অলক্ষিতে টিপিয়া টিপিয়া দেখিল । তাহ ছাড়া এ-ধরণের কথাবার্তা—এই তো লে চায় ! কোথায় সে ছিল পাড়াগায়ের গরীব ঘরের ছেলে—তিন ক্রোশ পথ হাটিয়া মামূজোরানের স্কুলে পড়িতে যাইত, সে এখন কোথায় আসিয়া পড়িয়াছে ! এ-ধরণের একটা উৎসবের মধ্যে তাহার উপস্থিতি ও পাঁচজনের একজন হইয়া বসিবার আত্মপ্রদাদে ঘরের তাবৎ উপকরণ ও অনুষ্ঠানকে যেন সে সারা দেহ-মন দ্বারা উপভোগ করিতেছিল। কৃষিকার্যে উৎসাহী ভদ্রলোকটি অন্ত কথা তুলিয়াছেন, কিন্তু অপুর দক্ষিণ ধারের দলটি পূর্ব আলোচনাই চালাইতেছেন এখনও । অপুর মনে হইল সে-ও এ-আলোচনায় যোগদান করিবে, আর হয়ত এ-ধরণের সম্রাস্ত সমাজে মিশিবার সুযোগ জীবনে কখনও ঘটিবে না। এই সময় দু-এক কথা এখানে বলিলে সে-ও তো একটা আত্মপ্রসাদ। ভবিষ্যতে ভাবিয়া আননা পাওয়া যাইবে। লাস-নে চশমাপর যুবকটির নাম হীরক সেন। নতুন পাশ-করা ব্যারিস্টার। মুখে বেশ বুদ্ধির ছাপ—কি কথায় সে বলিল—ৎসব মানি নে বিমলবাবু, দেহ একটা এপ্রিন— এঞ্জিনের যতক্ষণ স্টীম থাকে, চলে—যেই কলকজা বিগড়ে যায়, সব বন্ধ—