পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মৌরীফুল (నిశిషి সন্ধ্যার পরে আবার অনেকে চওঁীমগুপে জড় হুইল । স্বরেন এবার যেন এখানকার এই সকল আনন্দস্রোতে নিজেও ভাসিয়া গেল। সাতকড়ির বেহালা ছ'ডিনবার ফরমাইশ করিয়া শুনিল, তার ছেলের কীর্তনের তারিফ, করিল। সাতকড়ি বলিল—গায়ের সব ছেলেরা আমার ধরেছে, তোমার বলতে সাহস করে না, বাবাজী, এবার ওরা একটা শখের দল খুলছে, তোমার কিছু চাদ দিতে হবে। তিনি আরও কি বলিতে যাইতেছিলেন, এমন সময়ে একটি লোক হাসিমুখে চণ্ডীমণ্ডপে উঠিয়া হাত তুলিয়া সকলকে নমস্কার করিল। সাতকড়ি বলিলেন—এসো মাস্টার বলে । স্কুল ছেড়ে দিয়ে এলে ? সুরেন বাবাজী, এর সঙ্গে তোমার আলাপ নেই, ইনি পাশের গায়ে স্কুল খুলেছেন ; খুব ভালো মাস্টার, নিভাননীকে ইনি একবেলা ইংরাজী পড়ান। মাস্টার স্বরেনের দিকে চাহিয়া দাত বাহির করিয়া হাসিল । তাঁহাকে দেখিয়া মুরেনের মনে বিশেষ ভক্তির উদ্রেক হইল না। এমন তেল মাখিয়াছে যে কানের পাশ গড়াইয়া পড়িতেছে, মুখ পানে লাল, বোকার মত হাসিটা। ই, ইংরাজীর অধ্যাপক বটে। ভাবী পত্নীর ইংরাজী শিক্ষাটা হইতেছে ভালোই। মাস্টার জুটিয়াছে যখন এমন । মাস্টার বসিয়া বসিয়া বক্‌বক্ করিতেছিল। নিজের কৃতিত্ব ব্যাখ্যা করিবার সুযোগ কে ছাড়ে ? কি করিয়া নিভাননীকে অক্ষর চিনাইল কি করিয়া এ-বি-সি লিখিতে শিখাইল সেই সব বলিল। মাস্টারের কথা শুনিয়া মুরেনের মনে হইল—ফাস্ট বুকের ঘোড়ার গল্প তার ইংরেজী-ভাষাজ্ঞান-রূপ সৌধের সর্বোচ্চ। অতএব ছাত্রীর বিদ্যা কিরূপ হইয়াছে, তাহ সহজেই অল্পমান করা যাইতে পারে। কিন্তু কি করিবে সে । এই দূর পাড়াগায়ের অশিক্ষিতা মেয়েকেই জীবনসঙ্গিনী করিয়া লওয়া ছাড়া গত্যন্তর নাই। মেসের দেনা মিটাইতে না পারিলে আগামী মাসে ছাড়িতে হইবে-চারিধারে বন্ধুবান্ধুৰ-মহলে দেন, দেন। কলিকাতায় আর কতদিন টিকিয়া থাকা চলিবে ? ভাগ্যে, সে এই মেয়েটির বাপের এক বন্ধুর নিকট হইতে মেয়ের সন্ধান পাইয়াছিল। তিনিও তাহার মেসেই থাকেন। র্তাহার চিঠি লইয়াই সে এখানে আসিয়াছে মেয়ে দেখিতে। পালটি ঘর, দেখিতে মুত্র, কলেজে পড়াশুনা করিতেছে—ইহাদেরও আপত্তি হইবার কথা নয়। কিন্তু একটা গোলমাল আছে । সে-কথা এখনও পর্যন্ত সে কাহাকেও বলে নাই, কারণ কেহ ভাঁহাকে জিজ্ঞাসা করে নাই। সে অতি দরিদ্র, তাহার নিজেদের ঘর বাড়ি পর্যন্ত নাই, তাহার বাবা চিরকাল শ্বশুরালয়ে বাস করেন, সেকালের ঘরজামাই। ইহাদের কথাবার্তায় সে বুঝিতেছে, যে শিক্ষিত ও শহরে পাত্রের হাতে যেয়ে দিলে মেয়ে শহর-বাজারে বাসার থাকিবে, গাড়ি-ঘোড়া চড়িবে, গহনাগাটি পরিবে—ইহা মেয়ের দিদিমার একটা সাধ এবং সম্ভবতঃ মেয়েরও ।