পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অভিযাত্রিক 893, আমাদের কোনো আপত্তি ছিল না এ প্রস্তাবে। বোধহয় একটু বেশি সহজেই রাজি হয়েছিলুম। রামবাবুর বাড়ি গিয়ে, তারা যে প্রবাসী বাঙালী, সেটা ভালো করেই বুঝলুম ; ছেলেমেয়ের ভালো বাংলা বলতে পারে না, কিন্তু দেহাতী হিন্দী বলে বিহারীদের মতই। তাদের বাড়িতে যত্ন আদর আমরা পেলুম কতকালের আত্মীয়ের মতে, রাত্রে থাকবার জন্তে কত অনুরোধ করলেন। আমাদের থাকলে চলে না, যেতে হবে অনেক দূর—পায়ে হেঁটে যাবো বলে বেরিয়ে এত অগ্রাম করবার ইচ্ছে ছিল না মোটেই । একটা জিনিস তাদের বাড়ি খেয়েছিলুম, কখনো ভুলতে পারা যাবে ন—করমচার অম্বল। রায়ার গুণে নয়, করমচার অম্বল জীবনে তার আগেও কখনো খাইনি, তারপরেও না, সেই छ८ळु । আমরা আবার যখন পথে উঠলুম, তখন বেশ আড়াইটের কম নয়। শীতের বেলা, ঘণ্টদুই হাটবার পরে রোদ একেবারে পড়ে গেল। ডিস্ট্রিক্টবোর্ডের রাস্ত সোজা তীরের মতো নাকের সামনে বহুদূর পর্যন্ত চলে গিয়েচে । দ্বধারে ধূ-ধূ করচে জনহীন প্রান্তর, ডাইনে অনেক দূরে মারফ পাহাড় নীল মেঘের মতো দেখা যায়। স্বর্য ক্রমে পাহাড়ের পেছনে অস্ত গেল, সন্ধ্যার অন্ধকার নেমে আসচে, তখনও রাস্তার দুধারে মাঠ আর মাঠ। অম্বিক ঐদেশের লোক। তাকে বললুম—কোথায় থাকবে রাত্রে হুে ? গ্রামের চিহ্ন তো দেখচিনে— অম্বিকীও কিছু জানে না। সে এদিকে কখনো আসেনি। আরও কিছুদূর গিয়ে আমবাগানের আড়ালে একটা বস্তি দেখা গেল—কতকগুলো খোলার ঘর এক জায়গায় তাল পাকানো, এদেশের ধরনে। ঘোর অপরিষ্কার। জিজ্ঞেস করে জানা গেল, বস্তির নাম রজাউন। একজন লোককে বলা গেল এখানে রাত্রে থাকবার কোথাও একটু স্থান হবে কি না ; তারা বললে কাছারি বাড়িতে দুখন চারপাই আছে, বিদেশী লোক এলে কাছারি-বাড়িতে থাকে। কাছারি-বাড়ির অবস্থা দেখে আমরা পরস্পরের মুখের দিকে চাইলাম। ঘোড়ার আস্তাবলও এর তুলনায় স্বর্গ। একটা ভাঙা খোলার ঘর, তার চাল পড়েচে ঝুলে, বাইরের দাওয়ায় দ্বখানা চারপায় আছে বটে, কিন্তু তাতে শোওয়া চলে না। কাছারিঘরের মধ্যে এত জঞ্জাল যে সেখানে রাত্রিযাপনের চেষ্টা করলে সর্পাঘাত অবশ্যম্ভাবী। আমরা বললাম-- আর কোথাও জায়গা নেই ? —না বাৰু নিজেদের তাই থাকবার জায়গা হয় ন—গরিব লোকের বন্তি, আপনাদের জায়গা দেবে কোথায় ? 動 পড়ে গেলুম বেজায় মুশকিলে। সন্ধ্যা হয়েছে, সপ্তমীর জ্যোৎস্ব মাঠ-বাট আলো করেচে, নিকটে আর কোনো বস্তিও দেখা যায় মা—এখন কি করি ? একজন আমাদের অবস্থা দেখে বললে—বাবু, আপনার থানায় যান। বস্তির পশ্চিম