পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/২৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কেদার রাজা sb> —বেশ কথা তো । কলকাতার মত জায়গা আছে ভাই ? এখানে নিত্য আমোদ, লোকজন—ইচ্ছে হ’ল আজ শিবপুরে কোম্পানীর বাগানে বেড়াতে গেলাম—ইচ্ছে হ’ল আঞ্জ জতে গেলাম— 을 —সে আবার কি ? —মানে চিড়িয়াখানা। যখন যেখানে যেতে চাও গেলে, যা খাবার ইচ্ছে হয় খেলে, এই তোমার বয়েস ! হেসে খেলে যদি এখন না বেড়ালে তবে কবে আর কি করবে ? মানবজীবনে এই সবই তো আসল । জঙ্গলে থাকলাম আর আলোচাল খেলাম-এজন্যে কি আসা জগতে ? —কি করব বলন । অলপ বয়সে কপাল পড়েছে যখন, তখন কি আর উপায় আছে— ব্রাহ্মণের ঘরের মেয়ের ? বাবাও টাকার মানুষ নন যে কলকাতায় বাসা করে রাখবেন । —তুমি ইচ্ছে করলেই সব হয়। কলকাতায় থাকতে চাও, বাসা কেন--খব ভাল ভাবে থাকতে পারবে এখন-স্টাইলে থাকবে। রেডিও রাখবে এখন বাড়িভে— —সে কি ? —বেতার। ওই শোনো বাজছে—ওই যে দোকানের সামনে লোক জমেছে ? গান গাইছে না ? তার পর গ্রামোফোন মানে কলের গান – -छान । —সে কলের গান রাখো—মটর পষ‘্যস্ত হয়ে যাবে। আজ এখানে বেড়াও, কাল ওখানে বেড়াও । ইচ্ছে হ’ল আজ কাশী বেড়াতে যাবে, কাল এলাহাবাদ কি দাঞ্জিলিং বেড়াতে যাবে শরং হি হি করে হেসে উঠে বললে, আপনি যে রূপকথার গল্প আরম্ভ করে দিলেন দেখছি । আমি মুখে বললেই সব হবে—এ যেন সেই আরব্য উপন্যাসের দৈত্যের—যাক, গে, সত্যি হোক না হোক—ভেবে তো নিলাম—বেশ লোক কিন্তু আপনি ! —আমি মোটেই গল্পকথা বলি নি ভাই। আপনি ইচ্ছে করলেই হয়— —আমি কি আর ইচ্ছে করলে বাবার চাকরি করে দিতে পারি? অবিশ্যি আমিও বুঝতে পারি বাবার যদি থিয়েটারে চাকরি হয়, তবে সব হয় । বাবা যে কি চমৎকার বেহালা বাজান, সে আপনি শোনেন নি—কলকাতার থিয়েটারে সে-রকম পেলে লফে নেয় । যেমনি বাজান, তেমনি গাইতে পারেন । হেনার হাসি পাচ্ছিল। পাড়াগে"য়ে একটা বড়ো এমন বেহালা বাজায় যে তাকে কলকাতার বড় থিয়েটারে লফে নিয়ে এত টাকা মাইনে দেবে যে তাতে ওদের বাড়ি, গাড়ি, জড়ি, ঢাক, ঢোল সব হয়ে যাবে- শোনো কথা ! বাঙাল কি আর গাছে ফলে ? হেনা চুপ করে ভাবলে । আর বেশী বলা কি উচিত হবে একদিনে ? অনেকদরে সে এগিয়েছে—অনেক কথা বলে ফেলেছে। মাগাঁ কি সত্যিই বোঝে না—না টং করছে ? কিন্তু যদি সত্যি ও বুঝতে পেরে থাকে তার কথার মন্ম"—তবে আর না বলাই ভালো। ভয় করে বাবা, এখনি ফোঁস করে উঠে একটা কাণ্ড বাধিয়ে তুলতে পারে । বাঙালনীকে বিশ্বাস নেই। শরৎ বললে, কই বললেন না আমি ইচ্ছে করলে কি করতে পারি ? এ কথার জবাবে হেনা খপ করে বলে ফেললে, তুমি বুঝতে পারছো না ভাই সত্যিই ठाशिा कि दलछि ? এই পৰ্য্যন্ত বলেই হেনার হঠাৎ বড় ভয় হ'ল। চোখ বঞ্জে সমদ্রে ঝাঁপ দেওয়ার দরকার নেই—আপাততঃ সাহসও নেই তার ৷ কথা সামলে নেবার জন্যে সঙ্গে সঙ্গে একই নিশ্বাসে সে কণ্ঠস্বরকে লঘ ও হাস্য-তরল করে এনে বললে, বকেলে এবার? একটু ঠাট্টা করছি