অঞ্চলের তাড়নায় বিমলা জানিতে পারিলেন যে, ব্রাহ্মণ থরহরি কাঁপিতেছে; বুঝিলেন যে, আর অধিক বাড়াবাড়ি করিলে ব্রাহ্মণের গতিশক্তি রহিত হইবে। অতএব ক্ষান্ত হইয়া কহিলেন, “রসিকরাজ! তুমি গাইতে জান?”
রসিক পুরুষ কে কোথায় সঙ্গীতে অপটু? দিগগজ বলিলেন, “জানি বই কি!”
বিমল বলিলেন, “একটি গীত গাও দেখি।”
দিগ্গজ আরম্ভ করিলেন,
“এ হুম্-উ, হুম্—সই কি ক্ষণে দেখিলাম
শ্যামে কদম্বেরি ডালে।”
পথের ধারে একটা গাভী শয়ন করিয়া রোমন্থন করিতেছিল; অলৌকিক শব্দ শুনিয়া বেগে পলায়ন করিল।
রসিকের গীত চলিতে লাগিল—
“সেই দিন পুড়িল কপাল মোর—
কালি দিলাম কুলে।
মাথায় চূড়া, হাতে বাঁশী, কথা কয় হাসি হাসি;
বলে ও গোয়ালা মাসী—কলসী দিব ফেলে”।
দিগ্গজের আর গান হইল না; হঠাৎ তাঁহার শ্রবণেন্দ্রিয় একেবারে মুগ্ধ হইয়া গেল; অমৃতময়, মানসোন্মাদকর, অপ্সরোহস্তস্থিত বীণাশব্দবৎ মধুর সঙ্গীতধ্বনি, তাঁহার কর্ণকুহরে প্রবেশ করিল। বিমলা নিজে পূর্ণস্বরে সঙ্গীত আরম্ভ করিয়াছিলেন।
নিস্তব্ধ প্রান্তর-মধ্যে নৈশ গগন ব্যাপিয়া সেই সপ্তস্বর পরিপূর্ণ ধ্বনি উঠিতে লাগিল। শীতল নৈদাঘ পবনে ধ্বনি আরোহণ করিয়া চলিল।