পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৪৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\లిటీ বিভূতি-রচনাবলী বিনয় বলেচে—আপনাদের কাল চলে গিয়েচে বয়েন জ্যাঠা । একালে গরিব লোকেরাই অভিনন্দন পাবে। দিন চাদ । আমরা শুনবো না । দশ টাকা দেবেন আপনি । কেন দেবেন না ? ৰ * এই নিয়ে উভয় পক্ষের তর্ক হয়ে গিয়েছে। বরেন চাদা দেয় নি, শেষ পর্যন্ত নাকি রলেছিল, আট আনা নিয়ে যাও । বিনয় না নিয়ে চলে এসেচে । তাতে কোন ক্ষতি হয় নি। বিনয়কে বললাম—বুধবার অভিনন্দন সভা, বাজারের বড় চাদনীতে সবাইকে জানিয়ে দাও— বিনয় বললে—আপনি শুধু পেছনে থাকুন, আমাদের ওপর কাজ করবার ভার রইলো । দু-তিন দিন খুব বর্ষ হোলো। আমি আর কোথাও বেরুতে পারি নি। ব্যাপারটা কতদূর এগিয়েচে তার খোজ নিতে পারলাম না। বুধবার দিন বিকেলের দিকে সেজেগুজে ৰাজারের দিকে বেরুলাম । জিনিসটা কি আমিই নষ্ট করে দিলাম? একবার দেখা দরকার । , বাজারে যেতেই দেখি, কেম্বিসের জুতে পায়ে, গায়ে জাম, গোঁর পিওন আমার আগে আগে চলেচে । g বড় চাদনিতে গিয়ে দেখলাম, ছোকরার দল দিব্যি সভা সাজিয়েচে । রঙিন কাগজের মালা, দেবদারু পাতা, মায় কলাগাছ—কিছু বাদ যায় নি। স্কুল থেকে চেয়ার-বেঞ্চি আনিয়েচে । ভেঁপু মুখে দিয়ে তারা বলে বেড়াচ্চে–‘আজ বেলা পাচটায় অবসর প্রাপ্ত পিওন—শ্ৰীগৌরচন্দ্র হালদারের বিদায়-অভিনন্দন-সভা হবে বড় চাদনিতে—আপনারা দলে জ্বলে যোগদান করুন।” স্কুলের ছেলেরা ভিড করে এলো সভায়, মাস্টারদের মধ্যে কেউ বাদ রইলেন না । বাজারের লোকও সকলে এলো—কি হয় দেখতে । ফলে সভা আরম্ভ হবার আগেই বসবার আসন সব ভতি হয়ে গেল। লোকে চারিদিকে দাড়িয়ে থাকতে আরম্ভ করলে । বিনয় নিয়ে এলো বরেন দাকে সসম্মানে অভ্যর্থনা করে। স্মিতমুখে বরেন দা সভায় ঢুকে আমাকে দেখে একটু যেন দমে গেল । তাহলে কি সভাপতি তাকে করা হবে না? আমাকে বললে—ভায়া যে ! কৰে এলে ? —আমি তো এসেচি, চার-পাচদিন হোলো । —তাই । —তার মানে বরেন-দা ? —এখন সব বুঝলাম ভায়া । তুমি যে এলেচো জানতাম না। এখন বুঝলাম। —কি বুঝলে ? o —তোমারই কাজ। নহলে, গোঁর পিওনের অভিনন্দন! এমন উদঘুটে কাণ্ড আবার কার মাথায় আসবে? তা ভুয়, আজকের সভাপতিত্বটা তুমিই করো।