38 আমার জীবন তাহাতে কিছু মাত্র কাতর হন নাই। ধর্ম বিপদের সম্বল, ধর্মের পরে আর ধন নাই, ধর্মবলে সমুদ্রতরঙ্গে পতিত হইলেও গোস্পদ তুল্য বোধ হয় । আহা জগদীশ্বরের কি আশ্চর্য মহিমা ! তাহাকে স্বচক্ষে দেখা দূরে থাকুক, তাহার নির্মিত কর্মের কণিকা মাত্র মনের মধ্যে উদয় হইলে, শরীর প্রাণ এককালে আচ্ছন্ন ও অবশ হইয়া পড়ে । এমন কি, স্বপ্ন দেখিলেও পরমেশ্বরের কর্মের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিলক্ষণ দীপ্তিমান দেখা যায় । ১২৮০ সালে ২০এ আশ্বিনের প্রভাতের সময় আমি একটি স্বপ্ন দেখিতেছি । আমি যেন একটি নদীতীরে দাড়াইয়া রহিয়াছি, ঐ নদীর তীরে একখানি নৌকা রহিয়াছে, ঐ নৌকার উপরে একজন মাঝি বসিয়া আছে । আমার সঙ্গে একজন চাকরাণী আছে, সেও আমার নিকটে দাড়াইয়া আছে ! আমি যেস্থানে দাড়াইয়া আছি, সেস্থান উত্তম বালুচর। ইতিমধ্যে উহারি কিঞ্চিৎ দূরে অল্প জায়গায় বৃষ্টি হইতেছে ; সে বৃষ্টি সর্বত্র হইতেছে না। ঐ বৃষ্টি অতি গভীর শব্দে নামিয়াছে । আমি এক দৃষ্টে ঐ বৃষ্টির দিকে তাকাইয়া আছি। দেখি, সে বৃষ্টি যেন স্বর্ণবৃষ্টি হইতেছে! এই প্রকার দেখিতে দেখিতে বৃষ্টি যেন আমার নিকটে আসিতে লাগিল। তখন দেখিলাম, ঐ বৃষ্টিতে যেন স্বর্ণ চাপ৷ সকল পড়িতেছে । তখন আমি এই আশ্চর্য কাণ্ড দেখিয়া মহা পুলকিত হইয়া আমার ঐ চাকরাণীটিকে বলিলাম, দেখ, পরমেশ্বরের কি আশ্চর্য কাও ! স্বৰ্গ হইতে স্বর্ণচাপ সকল পড়িতেছে, ঐ বুঝি পুষ্পবৃষ্টি। এই বলিয়া মহা আহলাদিত হইয়া বলিতেছি, এস । আমরা এই স্বর্ণ চাপা কুড়াইয়া লই । তখন আমার ঐ স্বর্ণচাপ দেখিয়া মনে এত আহলাদ হইয়াছে যে সে আনন্দ আমার হৃদয়ে আর ধরিতেছে না । আমার মনের এই প্রকার ভাব বুঝিতে পারিয়া, ঐ নৌকার মাঝি আমাকে বলিতে লাগিল। আপনি ঐ স্বর্ণচাপা দেখিয়া গ্রহণের জন্ত এত ব্যস্ত কেন ? ঐ স্বর্ণবৃষ্টি আপনার জন্তই হইতেছে । ও স্বর্ণটাপা আপনি পাইবেন, আপনার নিকটেই আসিতেছে । তখঙ্গ আমার মন কি পর্যন্ত পৰিপূর্ণ হইল,তাহ মুখে বলা যায় না।