ল্যের যেন অভাব; অধরে আত্মম্ভরীময় সদা প্রস্ফুটিত হাস্যরেখা যেন নিমীলিত। আমার মায়া করিতে লাগিল। পাছে সে ভাবে আমি তাহার প্রতি অপ্রসন্ন—আর সেরূপ মনে করি বার যথেষ্ট কারণও বর্তমান; তাই আমি সহস্য ভাবে আগেই বলিলাম; “এই যে কুসুম! অনেক দিন পরে দেখা!”
কুসুম একটু চাপা ভাবে উত্তর করিল—
“হ্যাঁ কত দিন ভেবেছি দেখা করতে যাব-কিছুতেই কেমন ঘটে ওঠেনি। তোমরাই কোন আমাদের বাড়ী আস?”
ইহার উত্তর যোগাইল না—বলিলাম “আমি দেশে যাচ্ছি—”
“দেশে! কেন?”
চঞ্চল বলিয়া উঠিল, “মনের দুঃখে বনবাস আর কি!”
আমি অপ্রতিভ হইয়া পড়িলাম; ছি কুসুম কি ভাবিবে? চঞ্চলও বলিয়া বোধ হয় বুঝিল কথাটা কুসুমের মনে লাগিতে পারে। তাড়াতাড়ি অন্য কথা পাড়িল-বলিল “তা পর দিদি ডাক্তারের খবর কি?”
কুসুম বলিল—“তাঁর খবর আমি কি জানি। মণি সম্ভবতঃ বলতে পারে; ওদের ওখানে না প্রায়ই যান? কেন মনের দুঃখ কিসের? মণির মত সৌভাগ্য আমাদের হ’লে আমরা ত বেঁচে যেতুম!”
উদ্দেশ্য অবশ্য ঠাট্ট, কিন্তু ইহার মধ্য হইতে সত্যের আভাষ প্রকাশ পাইল। বলিতে বলিতে কুমুমের চাপা দীর্ঘ নিশ্বাস পড়িল। সে নিশ্বাসে ঈষৎ যেন ঈর্ষামাখা নৈরাশ্য বেদনা ব্যক্ত হইল। বুঝিলাম কুসুম ভালবাদে, সত্যই ভালবাসে; কিন্তু কাহাকে? তাঁহাকে না ইঁহাকে? মিষ্টার ঘোষকে-না ডাক্তারকে?