পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/২১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যl গিয়াছিল ; সুতরাং যাত্রা করিতে গিয়া অভিনেতারা আপনাপন ভূমিকা ভুলিয়া গেল, বালকদের ঐক্যতান সঙ্গীত তাল ও রাগিনীর মর্য্যাদা রক্ষা করিল না, ঢোল “চপচপ” করিতে লাগিল এবং “ছড়ি" লাগাইবা মাত্র বেহালা করুণ আৰ্ত্তনাদ করিয়া উঠিল। - যাত্রা ভাঙ্গিবামাত্র গৃহস্বামী“অধিকারী”কে ডাকিয়া পাঠাইলেন। কম্পিত বক্ষে অমুকুল গৃহস্বামীর সম্মুখে উপস্থিত হইল। বাবু জিজ্ঞাসা করিলেন “আপনিই এ দলের অধিকারী ?” অমুকুল নীরবে ঘাড় নাড়িয়া সম্মতি জানাইল । বাবু বলিলেন “আজ ৩• বৎসর আমাদের বাটীতে যাত্রা হইতেছে কিন্তু এমন সুন্দর যাত্র। কখন শুনি নাই। আমার ইচ্ছা আপনাকে এজন্য উপযুক্তরূপে পুরস্কৃত করি । অধিকারীর পুরস্কারের ব্যবস্থা দেখিয়া দলের লোক “যঃ পলায়তি স জীবতি" ভাবিয়া যে যেখানে পাইল সরিয়া পড়িল । তৃতীয়-দিন নিশীথরাত্রে বিদীৰ্য্যমান হৃদয়ে অবসন্ন সৰ্ব্বস্বন্তি অমুকুল চোরের মত আপনার গৃহে ফিরিয়া আসিল। রাজা হরিশ্চন্দ্রের রাজ্যমুখ তাহার ভাগ্যে ঘটিবার পূৰ্ব্বেই ভাগবিপৰ্য্যয়ের অন্ধটা অতিনীত হইয়া গেল। এখন অমুকুলের আশ– হরিশচন্দ্রের প্রখম অঙ্কের নিরবচ্ছিন্ন সৌভাগ্যমুখ বুঝিবা তাহার জন্য অপেক্ষ করিতেছে। & সেই অমুকুল অবস্থার জন্ত অমুকুল আশাপথ চাহিয়া রহিল। ফলিত জ্যোতিষ কিন্তু – ‘আশাপথ চেয়ে চেয়ে দিন ত ফুরায়ে গেল !" ভাগ্যোদয়ের শুভদিম অতীত হইয়া গিয়tfছল । ব্যাপার কি বুঝিবার জন্য অমুকুল আর একবার ভাল করিয়া জন্মনক্ষত্রের “তোগ্যদণ্ডের পরিমাণ" এবং গ্ৰহগণের চক্র ও মন্দগতি পরীক্ষা করিয়া দেখিল, কিন্তু কোথাও কোন ক্রটি বুঝিতে পারিল না । • go মহাজনের ইতি পূৰ্ব্বেই তাহার বিরুদ্ধে একতরফা ডিগ্রি কবিয়া লইয়াছিল।

  • শ্বশুর জনাৰ্দ্দন চক্রবর্তী লিখিয়াছিলেন— “স্মরণ করিও যে তোমার স্ত্রী কন্যাকে গ্রহণ করা না করা একমাত্র তোমর ইচ্ছা বা অনিচ্ছার অধীন নহে। তোমার পরিবারবর্গের ভরণ পোষণ করিতে তুমি আইনতঃ বাধ্য। অতএব যদি তুমি সত্বরে তোমার হীন চরিত্র বন্ধু বান্ধবের কুসংসর্গ পরিত্যাগ করিয়া স্ত্রী কন্যাসম্বন্ধে সুব্যবস্থা না কর, তাহা হইলে আমি অধিক দিন তোমাকে জামাতা বলিয়া ক্ষমা করিতে পারিব না।"

পিতৃব্য জানাইয়াছিলেন যে তিনি প্রাচীন হইয়াছেন, চিমুকাল সংসারে জড়িত থাকিয়া পরকালের পথে কণ্টক রোপন কয়া তাহার অভিপ্রেত নহে। তাহার ইচ্ছা আগামী বৈশাখের প্রথমেই তিনি বৃন্দাবন বাস করেন । চারিদিক হইতে এইরূপে বিপন্ন হইয়া সন্ধ্যার অন্ধকারে অমুকুল চিন্তামগ্নচিত্তে নদীতীরে ভ্রমণ করিতেছিল।