পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (সপ্তম সম্ভার).djvu/৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্রই ভাবিয়া কোন কুল-কিনারাই দেখিতেছিলেন না। অথচ একটা কিছু করা নিতান্তই আবশ্বক—স্বরেশের নিরুদেশ অবস্থার উপর বরাত দিয়া যে চিরদিন চলিবে না, অথবা মেয়ের মত নিজের খেয়ালে মগ্ন হইয়া, চোখ বুজিয়া থাকিলেই যে বিপদ উত্তীর্ণ হইতে পারা যাইবে না, তাহাও হাড়ে হাড়ে বুঝিতেছিলেন। হতাশ-প্রেমিক একদিন যে চাঙ্গ হইয়া উঠিবে এবং সেদিন ফিরিয়া আসিয়া কথাটা চারিদিকে রাষ্ট্র করিয়া মস্ত হাঙ্গামা বাধাইয়া দিবে এবং যে টাকাটা চেকের দ্বারা তাহাকে দিয়াছে —তাহা আর কোন লেখাপড়া না থাকা সত্ত্বেও যে আদালতে উড়াইতে পারা যাইবে না, ভাবিয়া ভাবিয়া এ-বিষয়ে একপ্রকার তিনি নি:সংশয় হইয়া উঠিয়াছিলেন । কিন্তু, মেয়ের সহিত এ-বিষয়ে একটা পরামর্শ করিবার পর্য্যন্ত জো ছিল না। স্বরেশের নামোল্লেখ করিতেও তাহার ভয় করিত।” এখন অচলার ওই শান্ত স্থির মুখচ্ছবির প্রতি চাহিয়৷ চাহিয়া তাহার ভারি একটা চিত্তজালার সহিত কেবল মনে হইতে লাগিল, এই মেয়েটাই তাহার সকল দুঃখের মূল। অথচ, কি স্ববিধাই না হইয়াছিল, এবং অদূর-ভবিষ্যতে আরও কি হইতে পারিত ! যে নিষ্ঠুর কন্যা পিতার বারংবার নিষেধ সত্ত্বেও তাহার স্থখ-দুঃখের প্রতি দৃকপাতমাত্র করিল না, সমস্ত পণ্ড করিয়া দিল, সেই স্বার্থপর সন্তানের বিরুদ্ধে র্তাহার প্রচ্ছন্ন ক্রোধ অভিশাপের মত যখন তখন প্রায় এই কামনাই করিত—সে যেন ইহার ফল ভোগ করে, একদিন যেন তাহাকে র্কাদিয়া বলিতে হয়, “বাবা, তোমার অবাধ্য হওয়ার শাস্তি আমি পাইতেছি ।” পাত্র হিসাবে স্বত্বেশ যে মহিমের অপেক্ষ অসংখ্য গুণে অধিক বাঞ্ছনীয়, এ বিশ্বাস তাহার মনে এরূপ বদ্ধমূল হইয়া গিয়াছিল যে, তাহার সম্পর্ক হইতে বিচ্যুত হওয়াটাকে তিনি গভীর ক্ষতি বলিয়া গণ্য করিতেছিলেন । মনে মনে তাহার উপর তাহার ক্রোধ ছিল না। এত কাণ্ডের পরও যদি আজ আবার তাহকে ফিরিয়া পাইবার পথ থাকিত, উপস্থিত বিবাহ ভাঙ্গিয়া দিতে বোধ করি লেশমাত্র ইতস্তত: করিতেন না । কিন্তু কোন উপায় নাই—কোন উপায় নাই ! অচলার কাছে তাহার আভাসমাত্র উত্থাপন করাও অসাধ্য । সেলাই করিতে করিতে অচলা সহসা মুখ তুলিয়া বলিল, বাবা, স্বরেশবাবুর ব্যাপারটা পড়লে ? অচলার মুখে স্বরেশের নাম ! কেদারবাবু চমকিয়া চাহিলেন । নিজের কানকে র্তাহার বিশ্বাস হইল না। সকালের খবরের কাগজটা টেবিলের উপর পড়িয়াছিল ; অচলা সেটা তুলিয়া লইয়া পুনরায় সেই প্রশ্নই করিল। কাগজখানার স্থানে স্থানে তিনি সকালবেলায় চোখ বুলাইয়া গিয়াছেন। কিন্তু অপরের সংবাদ খুটিয়া জানিবার মত আগ্রহাতিশয্য তাহার মনের মধ্যে এখন আর ছিল না। কহিলেন, কোন সুরেশ ? (చిe