পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (সপ্তম সম্ভার).djvu/২০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ অচলা চমকিয়া চোখ মেলিয়া দেখিল, বেহা অার নাই, শীতের সন্ধ্যা সমাগতপ্রায় । একটা দীপ্তিহীন নিম্প্রভতা শাস্তির মত আকাশের সর্বাঙ্গে ভরিয়া আসিয়াছে, লজ্জা পাইয়া উঠিয়া দাড়াইল এবং হাসিয়া কহিল, আমি যে একেবারে সন্ধ্যার পরেই খাব বলে ঠিক করেছি লালুর মা। আজ ক্ষিধে-তেষ্টা এতটুকু নেই। লালুর মা বিস্থিত হইয়া কহিল, বড়বাবুর খাওয়া হয়ে গেলেই তুমি খাবে, একটু আগেই যে বললে বহু-মা ? t না:–একেবারে রাত্রিতেই থাবো, বলিয়া আর বেশি বাদামুবাদের অবসর না দিয়াই অচলা ত্বরিতপদে উপরে চলিয়া গেল ! একটু সময় পাইলেই সে উপরের বারান্দায় রেলিঙের পার্থে চৌকি টানিয়া লইয়া নদীর দিকে চাহিয়া চুপ করিয়া বসিত। আজিকার রাত্রেও সেইরূপ বসিয়াছিল, হঠাৎ রামবাবুর চটিজুতার শব্দ পাইয়া অচলা ফিরিয়া দেখিল, বৃদ্ধ একেবারে মাঝখানে আসিয়া দাড়াইয়াছেন এবং কিছু বলিবার পূৰ্ব্বেই তিনি হাতের ছকাটা এককোণে ঠেস দিয়া রাখিয়া আর একখানা চেয়ার কাছে টানিয়া লইয়া বলিলেন । ঈষৎ হাসিয়া কহিলেন, সেই কথাটার একটা মীমাংসা করতে এলাম স্বরম, তোমার ব্ৰহ্মজ্ঞানী বাবাটি ঠিক, না এই বুড়ো জ্যাঠামশায়ের কথাটি ঠিক, তর্কটার যাই হোক একটা নিম্পত্তি না ক’রে আজ আর নীচে যাচ্চিনে । অচলা বুঝিল, এ সেই জাতিভেদের প্রশ্ন, শ্রাস্তস্বরে বলিল, আমি তর্কের কি জানি জ্যাঠামশাই । রামবাৰু মাথা নাড়িয়া কহিলেন, ওরে বাস্ রে, তুমি কি সোজা লোকের বেটি না কি মা ! তবে কথাটা না কি একেবারে মিথ্যে, তাই যা বৃক্ষে, নইলে ও-বেলায় ত হেরে গিয়েছিলাম আর কি ! অচলার কোন বিষয়ু লইয়াই আলোচনা করিবার মত মনের অবস্থা নয় ; সে এই তর্কযুদ্ধ হইতে আত্মরক্ষার একটুখানি ফাক দেখিতে পাইয়া কহিল, তা হ’লে আর তর্ক কি জ্যাঠামশাই! আপনারই ত জিং হয়েছে! একটুকু থামিয়া বলিল, যে হেরে গেছে, তাকে আবার দু’বার করে হারিয়ে লাভ কি আপনার ? রামবাৰু তৎক্ষণাং কোন প্রত্যুত্তর দিলেন না। তাহার বয়স অনেক হইয়াছে, ংসারে তিনি অনেক জিনিস দেখিয়াছেন ; স্বতরাং, এই অবসন্ন কণ্ঠস্বরও যেমন র্তাহার অগোচর রহিল না, এই মেয়েটি যে মুখে নাই, ইহার মনের মধ্যে কি এই একটা ভয়ানক বেদন পাজার আগুনের মত অহনিশ জলিতেছে, ইহাও তেমনি যে শ্রাস্ত-পাণ্ডুর মুখের উপরে আর একবার স্পষ্ট দেখিতে পাইলেন। মুহূৰ্ত্তকাল মৌন থাকিয়া হঠাৎ একটা হাসিবার চেষ্টা করিয়া অত্যন্ত মেহের সহিত বলিলেন, নাঃছতো খাটল না মা ! বুড়ো-মানুষ, বকতে ভালবাসি-সন্ধ্যাবেলায় একলাটি প্রাণটা 3శి