পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (একাদশ সম্ভার).djvu/২৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

छद्विवशेन জ্যোতিষ ধীরে ধীরে বলিল, সবাই একই রকম হয় নামা, কেউ কেউ একটুআধটু বদলেও যায়। কিন্তু তাই বলে এমন ছেলে কি হাত-ছাড়া করা ভাল ? শশাঙ্ক ব্যারিস্টার হয়ে এসেচে, এর মধ্যেই একটু পসারও করেচে, আমার ত মনে হল না মা, বিয়ে হলে সরোজিনী মন্দ হাতে পড়বে। চাল-চলনে যা একটু তফাৎ ঘটেচে, সেটুকু যদি মাপ করে নিতে পার মা, ভবিষ্যতে বোধ করি ভালই হবে। মা বলিলেন, আমি বলচি জ্যোতিষ, এ কোনদিন তাল হবে না। তা ছাড়া বিদেশে গিয়েই যে বিদেশী হয়ে যায়, তাকে ত আমি কোনমতেই বিশ্বাস করতে পারব না। আর এই বা কেমন কথা যে, হিন্দুস্থানে গেলে হিন্দুস্থানী হ’ব, কাৰুলে গেলে কাবলি হ’ব, কটকে গিয়ে উড়ে হয়ে যাব—ন না জ্যোতিষ, তৃষ্ট ওকে বিদায় কর বাছা। ওটা মানুষ নয়—বাদয় । বাদরের হাতে আমি মাথা খুড়ে মলেও মেয়ে দিতে পারব না । কাহারও সম্বন্ধে মত প্রকাশ করিতেও যেমন জগৎতারিণীর বিলম্ব ঘটিত না, তাহার প্রকাশিত মতামতের মধ্যেও তেমনি সংশয়-দ্বিধার অবকাশ মাত্র থাকিত না। তা ছাভা, যে অপরাধে তিনি স্বামী পৰ্য্যন্ত ত্যাগ করিতে পারিয়াছিলেন, সেই অপরাধ যে তিনি কোন প্রলোভনেই ক্ষমা করিবেন না, তাহ নিশ্চয় বুঝিয়া জ্যোতিৰ নীরবে চলিয়া গেল, কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই ফিরিয়া আসিয়া কহিল, মা, একটা কথা ভেবে দেখবার আছে। মা জিজ্ঞাসা করিলেন, কি কথা ? জ্যোতিত্ব কহিল, সরোজিনীকে তোমরা যে শিক্ষা দিয়ে এসেচ, তাতে তার অমতেও কাজ করা চলবে না মা ! সেটা সবচেয়ে মন্দ কাজ হবে । শিশুকাল থেকে ওর ভার তোমরা নিলে না, দিলে বিদেশী মেমদের ওপর । এখন বড় হয়ে ওর মনের টানটা যে কোন দিকে ঝুঁকে থাকবে সেটা বোঝা ত শক্ত নয় মা । জগৎতারিণী চুপ করিয়া রছিলেন। এই কথাটা তিনি মনে মনে অস্বীকার করিতেও পারিলেন না, অথচ প্রকাশুে স্বীকার করিতে পারাও অসম্ভব। কিছুক্ষণ মৌন থাকিয়া বলিলেন, বেশ ত জ্যোতিষ, তোমরা সবাই যদি সায়েবমেম হতে চাও, হও, কিন্তু তার আগে আমাকে কাশী পাঠিয়ে দাও । আমি এতই যদি সহ করতে পেরে থাকি, এও সইতে পারব। জ্যোতিষ তাড়াতাড়ি হেঁট হইয়া মায়ের পায়ের ধূলা মাথায় লইয়া হাসিয়া কছিল, তা হলে আমাকেও কাশীতে গিয়ে থাকতে হবে । মাকে ছেড়ে যে আমার কোথাও থাকা চলবে না, সে ত দেশে ফিরেই ঠিক হয়ে গেছে মা ! ३१é