পাতা:পঞ্চভূত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

প্রাঞ্জলতা

কিন্তু গান সকলে করিতে পারে না এবং গানে সকলে সুখও পায় না। কাজেই সমাজ যতই অগ্রসর হয় ততই অধিকারী এবং অনধিকারী, রসিক এবং অরসিক, এই দুই সম্প্রদায়ের সৃষ্টি হইতে থাকে।’

 ক্ষিতি কহিল, ‘মানুষ বেচারাকে এমনি করিয়া গড়া হইয়াছে যে, সে যতই সহজ উপায় অবলম্বন করিতে যায় ততই দুরূহতার মধ্যে জড়ীভূত হইয়া পড়ে। সে সহজে কাজ করিবার জন্য কল তৈরি করে কিন্তু কল জিনিসটা নিজে এক বিষম দুরূহ ব্যাপার। সে সহজে সমস্ত প্রাকৃত জ্ঞানকে বিধিবদ্ধ করিবার জন্য বিজ্ঞান সৃষ্টি করে, কিন্তু সেই বিজ্ঞানটাই আয়ত্ত করা কঠিন কাজ; সুবিচার করিবার সহজ প্রণালী বাহির করিতে গিয়া আইন বাহির হইল, শেষকালে আইনটা ভালো করিয়া বুঝিতেই দীর্ঘজীবী লোকের বারো আনা জীবন দান করা আবশ্যক হইয়া পড়ে; সহজে আদান-প্রদান চালাইবার জন্য টাকার সৃষ্টি হইল, শেষকালে টাকার সমস্যা এমনি একটা সমস্যা হইয়া উঠিয়াছে যে মীমাংসা করে কাহার সাধ্য। সমস্ত সহজ করিতে হইবে, এই চেষ্টায় মানুষের জানাশোনা খাওয়া-দাওয়া আমোদপ্রমোদ সমস্তই অসম্ভব শক্ত হইয়া উঠিয়াছে।’

 স্রোতস্বিনী কহিলেন, ‘সেই হিসাবে কবিতাও শক্ত হইয়া উঠিয়াছে। এখন মানুষ খুব স্পষ্টতঃ দুই ভাগ হইয়া গিয়াছে। এখন অল্প লোক ধনী এবং অনেক নির্ধন, অল্প লোক গুণী এবং অনেক নির্‌গুণ। এখন কবিতাও সর্বসাধারণের নহে, তাহা বিশেষ লোকের। সকলই বুঝিলাম। কিন্তু কথাটা এই যে, আমরা যে বিশেষ কবিতার প্রসঙ্গে এই কথাটা তুলিয়াছি সে কবিতাটা কোনো অংশেই শক্ত নহে; তাহার মধ্যে এমন কিছুই নাই যাহা আমাদের মতো লোকও বুঝিতে না পারে— তাহ নিতান্তই সরল। অতএব তাহা যদি ভালো না লাগে, তবে সে আমাদের বুঝিবার দোষে নহে।’

১০৬