আমি মধুস্বদনের যে কঠোর সমালোচনা করেছিলুম[১] পরবর্তী কালে আমাকে তার প্রায়শ্চিত্ত করতে হয়েছে। বাংলাভাষার এই সমতলতা, এই দুর্বলতাটা দূর করবার জন্যে গদ্যে ও পদ্যে আমিও বহু সংস্কৃত শব্দ ব্যবহার করেছি।...
তুমি যে প্রাকৃত ছন্দকে চার-চার সিলেব্ল্এ ভাগ কর সেটা ঠিক বলে আমার মনে হয় না। আমি বলি এ-ছন্দে তিনমাত্রার ভাগটাই মূলকথা। এ-ছন্দে আমি যত গান রচনা করেছি তার সবগুলিতেই দাদরা তাল, সবসময়েই তিনমাত্রার ভাগ হয়।...সেইজন্যে তিনের ভাগে যেখানে কম পড়েছে সেখানে টেনে পুরিয়ে দিতে হয়।[২] যেমন—
আমি- | যদি- | জন্ম | নিতেম।
কালি—দাসের | কালে- |
এ-রকম ছন্দে আমরা যে প্রত্যেক পর্বে ফাঁক ভরিয়ে নিই তা নয়, গানের তালের মতোই যেখানে সুবিধে পাই সেখানেই কর্তব্য সেরে নিয়ে থাকি। তাতে ছন্দোনৃত্যের বৈচিত্র্য ঘটে। ভালো করে বিচার করে দেখলে বুঝতে পারবে, ঐ লাইনটাতে ‘আমি যদি’ দুই-দুই মাত্রায় দ্রুত পাঠ করে ‘জন্ম’ এবং ‘নিতেম’ শব্দের কাছ থেকে উভয়ের জরিমানা ডিক্রি করে নিয়েছি। নইলে ছন্দের তাল কাটতই, কেননা এটা নিঃসন্দেহে তিনমাত্রার তাল। ‘কালিদাসের’ শব্দটাতেও ঐ রকম রফানিষ্পত্তি করতে হয়েছে। অর্থাৎ ‘কালি’তে যেটুকু কম পড়েছে ‘দাসের’ মধ্যে সেটা আদায় করে নিতে হল।[৩] সব ফাঁকগুলি সমান ভরিয়ে দিয়েও আমি কবিতা লিখেছি।[৪] ...পূরবীর ‘বিজয়ী’ কবিতাটিতে আমি মাত্রার
- ↑ ভারতী ১২৮৪ শ্রাবণ-পৌষ, ১২৮৯ ভাদ্র।
- ↑ দ্রষ্টব্য পৃ ৬২-৬৩, ৭৪-৭৫।
- ↑ ‘হারিয়ে ফেলা বাঁশি আমার’ এবং ‘রূপ-সাগরে ডুব দিয়েছি’ এই রচনা-দুটির ছন্দোবিশ্লেষণ তুলনীয়, পৃ ৬৩-৬৪ এবং ৮৫-৮৬। গ্রন্থপরিচয়ে ‘পুনশ্চ বক্তব্য’ অংশ দ্রষ্টব্য।
- ↑ প্রাকৃত-বাংলার বেফাঁক ছন্দের দৃষ্টান্ত ৬৩-৬৪, ১৪৬ ও ১৯২ পৃষ্ঠার দ্রষ্টব্য।