দিয়াছেন তাহা ছাড়া, বোধ করি কেবল নিম্নলিখিত শব্দগুলিই নিয়মের বাহিরে পড়ে: বীর, ধীর, স্থির, সৎ, ঠিক, গোল, কাৎ, চিৎ, আড়। সংখ্যাবাচক এক, তিন, চার প্রভৃতি শব্দকে যদি বিশেষণ বলিয়া গণ্য করিতে হয় তবে এগুলি অনিয়মের ফর্দটাকে খুব মোটা করিয়া তুলিবে। এই প্রসঙ্গে এ কথা মনে রাখা দরকার ‘এক’ যেখানে বিশেষভাবে বিশেষণরূপ ধারণ করিয়াছে সেখানে তাহা ‘একা’ হইয়াছে।
“তিন অক্ষরের বাংলা শব্দ স্বরান্ত হইলে মাঝের অক্ষর আপন অকার বর্জন করে,” লেখক এই নিয়মের একটিমাত্র ব্যতিক্রমের উদাহরণ সংগ্রহ করিয়াছেন, ‘দরদী’। শব্দটির উচ্চারণ সম্বন্ধে সন্দেহ আছে। ‘হম্-দর্দী’ কথায় ‘র’য়ের অকার লুপ্ত। যাহাই হউক এই নিয়মের ব্যতিক্রম আছে বৈকি। যথা, সজনি, বচসা, গরবী, করলা (ফল)। উপসর্গ-বিশিষ্ট শব্দেও এ নিয়ম খাটে না। যেমন, বে-তরো, দো-মনা, অ-ফলা। বলা বাহুল্য খাঁটি সংস্কৃত বাংলায় চলিত থাকিলেও এ নিয়ম মানে না; যেমন, মালতী, রমণী, চপলা ইত্যাদি। এই প্রসঙ্গে বাংলার উচ্চারণ-বিকারের একটা নিয়ম উল্লেখ করা যাইতেছে। অনেক স্থলে তিন অক্ষরের স্বরান্ত শব্দে মধ্য অক্ষরের অকার লুপ্ত না হইয়া উকার হইয়া যায়। কাঁদন কাঁদুনে, আট-পহর আটপহুরে (আটপৌরে), শহর শহুরে, পাথর পাথুরে, কোঁদল কুঁদুলে ইত্যাদি।...
অগ্রহায়ণ ১৩২৬
২
অনধিকারচর্চায় অব্যবসায়ীর যে বিপদ ঘটে আমারও তাই ঘটিয়াছে। গত আশ্বিন-কার্তিকের শান্তিনিকেতন পত্রে ‘বাংলা কথ্যভাষা’ ‘অনুবাদ-চর্চা’ প্রভৃতি কয়েকটা প্রবন্ধে নিতান্তই প্রসঙ্গক্রমে বাংলা ভাষাতত্ত্ব সম্বন্ধে সংক্ষেপে কিছু আলোচনা করিয়াছিলাম। প্রবাসী তাহা উদ্ধৃত করিয়া দেওয়াতে আমার অজ্ঞানকৃত ও অসাবধানকৃত কতকগুলি ভুল বাহির হইয়া পড়িয়াছে, এই উপলক্ষে সেগুলি সংশোধন হইবার সুযোগ হইল বলিয়া আমি কৃতজ্ঞ আছি। শ্রীযুক্ত বিজয়চন্দ্র মজুমদার মহাশয় বাংলা ভাষার ব্যবহারে সাহিত্য-রসিক। আবার তাহার নাড়ী-পরিচয়ে বৈজ্ঞানিক; এইজন্য, তিনি আমার যে ত্রুটি ধরিয়াছেন