পাতা:বিশ্বপরিচয়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিশ্বপরিচয়

 পদার্থের মধ্যে অণু গুলি পরস্পর কাছাকাছি আছে একটা টানের শক্তিতে। তবু সোনার মতো নিরেট জিনিসের অণুরও মাঝে মাঝে ফাক আছে। সংখ্যা দিয়ে সেই অতি সূক্ষ্ম ফাঁকের পরিমাণ জানাতে চাইনে, তাতে মন পীড়িত হবে। প্রশ্ন ওঠে একটুও ফাঁক থাকে কেন, গ্যাস থাকে কেন, কেন থাকে তরল পদার্থ। এর একই জাতের প্রশ্ন হচ্ছে পৃথিবী কেন সূর্যের গায়ে গিয়ে এঁটে যায় না। সমস্ত বিশ্বব্রহ্মাণ্ড একটা পিণ্ডে তাল পাকিয়ে যায় না কেন। এর উত্তর এই পৃথিবী সূর্যের টান মেনেও দৌড়ের বেগে তফাত থাকতে পারে। দৌড় যদি যথেষ্ট পরিমাণ বেশি হোত তাহলে টানের বাঁধন ছিড়ে শূন্যে বেরিয়ে পড়ত, দৌড়ের বেগ যদি ক্লান্ত হোত তাহলে সূর্য তাকে নিত আত্মসাৎ করে। অণুদের মধ্যে ফাঁক থেকে যায় গতির বেগে, তাতেই বাঁধনের শক্তিকে ঠেলে রেখে দেয়। গ্যাসীয় পদার্থের গতির প্রাধান্য বেশি। অণুর দল এই অবস্থায় এত দ্রুতবেগে চলে যে তাদের পরস্পরের মিল ঘটবার অবকাশ থাকে না। মাঝে মাঝে তাদের সংঘাত হয় কিন্তু মুহূর্তেই আবার যায় সরে। তরল পদার্থের আণবিক আকর্ষণের শক্তি সামান্য ব’লেই চলন বেগের জন্যে তাদের মধ্যে অতিঘনিষ্ঠতার সুযোগ হয় না। নিরেট বস্তুতে বাঁধনের শক্তিটা অপেক্ষাকৃত প্রবল। তাতে অণুর দল সীমাবদ্ধ স্থানের ভিতর আটকা পড়ে থাকে। তাই

২২