পাতা:গল্পগুচ্ছ (চতুর্থ খণ্ড).pdf/২২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মুকুট
৯৯৫

তখন আকাশ পাতাল যেন শিহরিয়া উঠিল। চন্দ্রনারায়ণ চমকিয়া জাগিরা ‘এসো ভাই’ বলিয়া আলিঙ্গনের জন্য দুই হাত তুলিয়া দিলেন। ইন্দ্রকুমার দাদার আলিঙ্গনের মধ্যে বন্ধ হইয়া শিশুর মতো কাঁদিতে লাগিলেন।

 চন্দ্রনারায়ণ ধীরে ধীরে বলিলেন, “আঃ, বাঁচিলাম ভাই! তুমি আসিবে জানিয়াই এতক্ষণ কোনোমতে আমার প্রাণ বাহির হইতেছিল না। ইন্দ্রকুমার, তুমি আমার উপরে অভিমান করিয়াছিলে, তোমার সেই অভিমান লইয়া কি আমি মরিতে পারি। আজ আবার দেখা হইল, তোমার প্রেম আবার ফিরিয়া পাইলাম— এখন মরিতে আর কোনো কষ্ট নাই।”

 বলিয়া দুই হাতে তাঁহার তীর উৎপাটন করিলেন। রক্ত ছুটিয়া পড়িল, তাঁহার শরীর হিম হইয়া আসিল। মৃদুস্বরে বলিলেন, “মরিলাম তাহাতে দুঃখ নাই, কিন্তু আমাদের পরাজয় হইল!"

 ইন্দ্রকুমার কাঁদিয়া কহিলেন, “পরাজয় তোমার হয় নাই দাদা, পরাজয় আমারই হইয়াছে।”

 চন্দ্রনারায়ণ ঈশ্বরকে স্মরণ করিয়া হাত জোড় করিয়া কহিলেন, “দয়াময়, ভবের খেলা শেষ করিয়া আসিলাম, এখন তোমার কোলে স্থান দাও।”—বলিয়া চক্ষু মদ্রিত করিলেন।

 ভোরের বেলা নদীর পশ্চিম পাড়ে চন্দ্র যখন পাণ্ডুবর্ণ হইয়া আসিল, চন্দ্রনারায়ণের মুদ্রিতনেত্র মুখচ্ছবিও তখন পাণ্ডুবর্ণ হইয়া গেল। চন্দ্রের সঙ্গে সঙ্গেই তাঁহার জীবন অস্তমিত হইল।