পাতা:গল্পসল্প - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গল্পসল্প

হচ্ছে বোঝানো, তাকে আবার বোঝাবে কে। একদিন একটা নমুনা শুনিয়ে তাক্ লাগিয়ে দিলেন। বললেন, আমার নায়িক যখন নায়ককে বলেছিল হাত নেড়ে ‘দিন রাত তোমার ঐ হিদ্হিদ্-হিদিক্কারে আমার পাঁজঞ্জুরিতে তিড়িতঙ্ক লাগে’, তখন তার মানে বোঝাতে পণ্ডিতকে ডাকতে হয় নি। যেমন পিঠে কিল মেরে সেটাকে কিল প্রমাণ করতে মহামহোপাধ্যায়ের দরকার হয় না।

 সভাপতি একদিন বিষয়টা ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ওহে বাচস্পতি, সেই ছেলেটার কী দশা হল।

 বাচস্পতি বললেন, সে ছেলেটার বুঝকিন্ গোড়া থেকেই ছিল বুঝভূম্বুল গোছের। তার নাম দিয়েছিলাম বিচ্কুমকুর।

 মথুরবাবু জিজ্ঞেস করলেন, ও নামটা কেন।

 বাচস্পতি বললেন, সে যে একেবারেই বিচ্কুমকুর। পাঠশালার পেডেণ্ডোকে দেখলেই তার আনতারা যেত ফুস্কলিয়ে। বুকের ভিতরে করতে থাকত কুড়ুক্কুর কুড়ুক্কুর। এমন ছেলেকে বেশি পড়ালে সে একেবারেই ফুসকে যাবে, এ কথাটা বলেছিল পাড়ার সব-চেয়ে যে ছিল পেড়াম্বর হুড়ুমকি। একটু রসুন— বুঝিয়ে বলি। পেডেণ্ডা কথাটা বালি দ্বীপের কাছে পেয়েছি। তাদের মুখের পণ্ডিত শব্দটা আপনিই হয়ে উঠেছে পেডেণ্ডো। ভেবে দেখুন, কত বড়ে ওজন, ওর বিদ্যের বোঝা ঠেলে নিয়ে যেতে দশ-বিশ জন ডিগ্রিধারী জোয়ানের দরকার হয়। আর পণ্ডিত— ছোঃ, তুড়ি দিয়ে তুড়তুড়ুং ক’রে উড়িয়ে দেওয়া যায়।

 অটলদা বললেন, বাচস্পতি, তোমার আজকেকার বর্ণনাটা যে একেবারেই চলতি গ্রাম্য ভাষায়। এ তোমাকে মানায় না। সেই সেদিন যে সাধু ভাষা বেরিয়েছিল তোমার মুখ দিয়ে, যার সধ্বংসৃনিত হার্দিক্যে বুদবুধিদের মন তিংতিড়ি তিংতিড়ি করে ওঠে, সেই ভাষার একটু নমুনা আজ এদের শুনিয়ে দাও। যে-ভাষায় ভারতের ইতিহাসটি গেঁথেছ, যার গুরু ভার হিসেব করে

৭০