বুলাইতে বিদায় কালীন বিমর্ষতা মুখে আনিবার জন্য চেষ্টা করিতে লাগিলেন।
অক্ষয়। কে মশায়! আপনি কে?
“আজ্ঞে মশায়, আপনার সহধর্ম্মিণীর সঙ্গে আমার বিশেষ সম্বন্ধ আছে” বলিয়া পুরুষ বেশধারী শৈল অক্ষয়ের সঙ্গে শেক হ্যাণ্ড্, করিল।
শৈল। মুখুজ্জেমশায় চিন্তে ত পারলে না?
পুরবালা। অবাক্ করলি! লজ্জা করচে না?
শৈল। দিদি, লজ্জা যে স্ত্রীলোকের ভূষণ—পুরুষের বেশ ধরতে গেলেই সেটা পরিত্যাগ করতে হয়। তেমনি আবার মুখুজ্জেমশায় যদি মেয়ে সাজেন, উনি লজ্জায় মুখ দেখাতে পারবেন না। রসিক দাদা, চুপ করে রৈলে যে।
রসিক। আহা শৈল! যেন কিশোর কন্দর্প! যেন সাক্ষাৎ কুমার, ভবানীর কোল থেকে উঠে এল! ওকে বরাবর শৈল বলে দেখে আস্চি, চোখে অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল, ও সুন্দরী, কি মাঝারি, কি চলনসই সে কথা কখনো মনেও ওঠেনি—আজ ঐ বেশটি বদল করেছে বলেই ত ওর রূপ খানি ধরা দিলে! পুরো দিদি, লজ্জার কথা কি বল্চিস্ আমার ইচ্ছে করচে ওকে টেনে নিয়ে ওর মাথায় হাত দিয়ে আশীর্ব্বাদ করি!
পুরবালা শৈলের তরুণ সুকুমার প্রিয়দর্শন পুরুষ মূর্ত্তিতে মনে মনে মুগ্ধ হইতেছিল। গভীর বেদনার সহিত তাহার কেবলি মনে হইতেছিল, আহা শৈল আমাদের বোন না হয়ে যদি ভাই হত! ওর এমন রূপ এমন বুদ্ধি ভগবান সমস্তই ব্যর্থ করে দিলেন। পুরবালার স্নিগ্ধ চোখ দুইটী ছল ছল করিয়া উঠিল।
অক্ষয় স্নেহাভিষিক্ত গাম্ভীর্যের সহিত ছদ্মবেশিনীকে ক্ষণকাল নিরীক্ষণ করিয়া বলিলেন—সত্যি বলছি শৈল, তুমি যদি আমার শ্যালী না হয়ে আমার ছোট ভাই হতে তা হলেও আমি আপত্তি করতুম না।