\రి\ు রবীন্দ্র-রচনাবলী তাই এই মহারণ্যে আমারাত্রে আসি গো একাকী, মহান ভাবের ভারে ছয়স্ত এ ভাবনারে কিছুক্ষণ-তরে তৰু দমন করিয়া যেন রাখি । চন্দ্ৰশূন্ত আঁধারের নিস্তরঙ্গ সমুদ্রমাঝারে সমস্ত জগৎ যবে মগ্ন হ'য়ে গেছে একেবারে অসহায় ধরা এক মহামস্ত্ৰে হোয়ে অচেতন নিশীথের পদতলে করিয়াছে আত্মসমর্পণ, তখন অধীর হৃদি অভিভূত হোয়ে যেন পড়ে— অতি ধীরে বহে শ্বাস, নয়নেতে পলক না নড়ে । প্রাণের সমুত্র এক আছে যেন এ দেহমাকারে, মহা উচ্ছ্বাসের সিন্ধু রুদ্ধ এই ক্ষুদ্র কারাগারে! মনের এ রুদ্ধস্রোত দেহখানা করি বিদারিত সমস্ত জগৎ যেন চাহে, সখি, করিতে প্লাবিত ! অনন্ত আকাশ যদি হ’ত এ মনের ক্রীড়াস্থল, অগণ্য তারকারাশি হ’ত তার খেলেনা কেবল, চৌদিকে দিগস্ত আসি রুধিত না অনন্ত আকাশ, প্রকৃতি জননী নিজে পড়াত কালের ইতিহাস, ছরস্ত এ মন-শিশু প্রকৃতির স্তন্ত পান করি আনন্দসঙ্গীতম্রোতে ফেলিত গো পৃষ্ঠতল ভরি, উষার কনকস্রোতে প্রতিদিন করিত সে স্নান, জ্যোছনা-মদিরাধারা পূর্ণিমায় করিত সে পান, ঘূর্ণ্যমান ঝটিকার মেঘমাঝে বসিয়া একেল কৌতুকে দেখিত যত বিদ্যুৎ-বালিকাদের খেলা, দুরন্ত ঝটিকা হোখা এলোচুলে বেড়াত নাচিয়া তরঙ্গের শিরে শিরে অধীর চরণ বিক্ষেপিয়া । ছরবে বলিত গিয়া ধূমকেতুপাখার উপরে, তপনের চারি দিকে ভ্ৰমিত সে বর্ষ বর্ষ ধোরে ।