“আঃ, কী বল ঠাকুরপো, তার ঠিক নেই। তোমার এনসাইক্লোপীডিয়া থেকে বুঝি—”
অমন কথা বলতে পারবে না, বউরানী। চরণ বলতে কী বোঝায় তা ওরা জানবে কী করে? ছাগলের খুরের মতো সরু সরু ঠেকোওআলা জুতোর মধ্যে লক্ষ্মীদের পা কড়া জেনানার মধ্যে ওরা বন্দী করে রেখেছে। সাইক্লোপীডিয়াওআলার সাধ্য কী পায়ের মহিমা বোঝে। লক্ষ্মণ চোদ্দটা বৎসর কেবল সীতার পায়ের দিকে তাকিয়েই নির্বাসন কাটিয়ে দিলেন, তার মানে আমাদের দেশের দেওররাই জানে। তা পায়ের উপরে শাড়ি টেনে দিচ্ছ তো দাও। ভয় নেই তোমার, পদ্ম সন্ধ্যেবেলায় মুদে থাকে বলে তো বরাবর মুদেই থাকে না—আবার তো পাপড়ি খোলে।”
“ভাই মনের কথা, এমনিতরে স্তব করেই বুঝি ঠাকুরপো তোমার মন ভুলিয়েছেন?”
“একটু ও না দিদি, মিষ্টিকথার বাজে খরচ করবার লোক নন উনি।”
“স্তুতির বুঝি দরকার হয় না?”
“বউরানী, স্তুতির ক্ষুধা দেবীদের কিছুতেই মেটে না, দরকার খুব আছে। কিন্তু শিবের মতো আমি তো পঞ্চানন নই, এই একটিমাত্র মুখের স্তুতি পুরোনো হয়ে গেছে, এতে উনি আর রস পাচ্ছেন না।
এমন সময় মুরলী বেয়ারা এসে নবীনকে খবর দিলে, “কর্তামহারাজা বাইরের আপিস-ঘরে ডাক দিয়েছেন।”
শুনে নবীনের মন খারাপ হয়ে গেল। সে ভেবেছিল মধুসূদন আজ আপিস থেকে ফিরেই একেবারে সোজা তার শোবার ঘরে এসে উপস্থিত হবে। নৌকো বুঝি আবার ঠেকে গেল চড়ায়।
নবীন চলে গেলে মোতির মা আস্তে আস্তে বললে, “বড়ঠাকুর কিন্তু তোমাকে ভালোবাসেন সে-কথা মনে রেখো।”