আমি ঘুরে বেড়াই শ্মশানে মশানে, গূঢ়তত্ব পাই সাধকদের কাছ থেকে। আমার উৎকটদন্তী গুরুর মুখকন্দর থেকে বেসুরতত্ত্ব অল্প কিছু জেনেছিলুম তাঁর পায়ে অনেকদিন ভেরেণ্ডার বিরেচক তৈল মর্দ্দন ক’রে।
বেসুর তত্ত্ব আয়ত্ত করতে তোমার বিলম্ব হয়নি সেটা বুঝতে পারছি। অধিকারভেদ মানি আমি।
দাদা, ঐ তো আমার গর্ব্বের কথা। পুরুষ হয়ে জন্মালেই পুরুষ হয় না, পরুষতার প্রতিভা থাকা চাই। একদিন আমার গুরুর অতি অপূর্ব্ব। বিশ্রী মুখ থেকে,—
গুরুমুখকে আমরা বলে থাকি শ্রীমুখ—তুমি বললে বিশ্রীমুখ।
গুরুর আদেশ। তিনি বলেন, শ্রীমুখটা নিতান্ত মেয়েলি—বিশ্রীমুখেই পুরুষের গৌরব। ওর জোরটা আকর্ষণের নয়, বিপ্রকর্ষণের। মানে কি না।
মানতে যে-হতভাগ্য বাধ্য হয় সে মানে বই কি।
মধুর রসে তোমার মৌতাত পাকা হয়ে গেছে দাদা, কঠোর সত্য মুখে রোচে না, ভাঙতে হবে তোমাদের দুর্ব্বলতা—মিঠে সুরে যার নাম দিয়েছ সুরুচি, বিশ্রীকে সহ্য করবার শক্তি নেই যার।
দুর্ব্বলতা ভাঙা সবলতা ভাঙার চেয়ে অনেক শক্ত। বিশ্রীতত্ত্বর গুরুবাক্য শোনাতে চাচ্ছিলে, শুনিয়ে দাও।
একেবারে আদিপর্ব্ব থেকে গুরু আরম্ভ করলেন ব্যাখ্যান। বললেন, মানবসৃষ্টির শুরুতের চতুর্ন্মুখ তাঁর সামনের দিকের দাড়ি-কামানো দুটো মুখ থেকে মিহি সুর বের করলেন। কোমল রেখাব থেকে মধুর ধারার মসৃণ মিড়ের উপর দিয়ে পিছলে গড়িয়ে এল কোমল নিখাদ পর্য্যন্ত। সেই সুকুমার স্বরলহরী প্রত্যুষের অরুণবর্ণ মেঘের থেকে প্রতিফলিত হয়ে অত্যন্ত আরামের দোলা লাগালে অতিশয় মিঠে হাওয়ায়। তারি মৃদু হিল্লোলে দোলায়িত নৃত্যচ্ছন্দে রূপ নিয়ে দেখা দিল নারী। স্বর্গে শাঁখ বাজাতে লাগলেন বরুণ দেবের ঘরণী।
১১৩
১৫