বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮৬
চৈতালি

যে কথায় প্রাণ মোর পরিপূর্ণতম
সে কথা বাজে না কেন এ বীণায় মম!
সে শুধু ভরিয়া উঠি অশ্রুর আবেগে
হৃদয়-আকাশ ঘিরে ঘনঘোর মেঘে;
মাঝে মাঝে বিদ্যুতের বিদীর্ণ রেখায়
অন্তর করিয়া ছিন্ন কী দেখাতে চায়!
মৌন মূক মূঢ়-সম ঘনায়ে আঁধারে
সহস। নিশীথরাত্রে কাঁদে শতধারে।
বাক্যভারে রুদ্ধকণ্ঠ রে স্তম্ভিত প্রাণ,
কোথায় হারায়ে এলি তোর যত গান।
বাঁশি যেন নাই, বৃথা নিশ্বাস কেবল—
রাগিণীর পরিবর্তে শুধু অশ্রুজল।

 ২৯ চৈত্র ১৩০২


অসময়

বৃথা চেষ্টা রাখি দাও। স্তব্ধনীরবতা
আপনি তুলিবে গড়ি আপনার কথা।
আজি সে রয়েছে ধ্যানে— এ হৃদয় মম
তপোভঙ্গভয়ভীত তপোবন-সম।
এমন সময়ে হেথা বৃথা তুমি প্রিয়া,
বসন্তকুসুমমালা এসেছ পরিয়া;
এনেছ অঞ্চল ভরি যৌবনের স্মৃতি—
নিভৃত নিকুঞ্জে আজি নাই কোনো গীতি।
শুধু এ মর্মরহীন বনপথ-’পরি
তোমারি মঞ্জীরদুটি উঠিছে গুঞ্জরি।
প্রিয়তমে, এ কাননে এলে অসময়ে;
কালিকার গান আজি আছে মৌনী হয়ে।