পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০৬
সংকলন

সহাস্য সহচরী না মনে করে থাকতে পারি নে। সে যেন একটি চিরজাগ্রত কল্যাণকামনার মতো ঠিক আমার নিদ্রিত মুখের উপর প্রফুল্ল স্নেহ বিক্রিরণ করতে থাকে।

মেঘ ও রৌদ্র

 শিলাইদা, ২৭ জুন ১৮৯৪। গল্প লেখবার একটা সুখ এই, যাদের কথা লিখব তারা আমার দিনরাত্রের সমস্ত অবসর একেবারে ভরে রেখে দেবে, আমার একলা মনের সঙ্গী হবে, বর্ষার সময় আমার বদ্ধ ঘরের সংকীর্ণতা দূর করবে, এবং রৌদ্রের সময় পদ্মাতীরের উজ্জ্বল দৃশ্যের মধ্যে আমার চোখের ’পরে বেড়িয়ে বেড়াবে। আজ সকালবেলায় তাই গিরিবালানাম্নী উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ একটি ছোটো অভিমানী মেয়েকে আমার কল্পনারাজ্যে অবতারণ করা গেছে। সবেমাত্র পাঁচটি লাইন লিখেছি এবং সে পাঁচ লাইনে কেবল এই কথা বলেছি যে, কাল বৃষ্টি হয়ে গেছে, আজ বর্ষণ অন্তে চঞ্চল মেঘ এবং চঞ্চল রৌদ্রের পরস্পর শিকার চলছে। হেনকালে পূর্বসঞ্চিত বিন্দুবিন্দু বারিশীকরবর্ষী তরুতলে গ্রামপথে উক্ত গিরিবালার আসা উচিত ছিল; তা না হয়ে আমার বোটে আমলাবর্গের সমাগম হল, তাতে করে সম্প্রতি গিরিবালাকে কিছুক্ষণের জন্যে অপেক্ষা করতে হল। তা হোক, তবু সে মনের মধ্যে আছে। আজ গিরিবালা অনাহূত এসে উপস্থিত হয়েছেন; কাল বড়ো আবশ্যকের সময় তাঁর দোদুল্যমান বেণীর সুচ্যগ্রভাগটুকুও দেখা যাবে না। কিন্তু, সে-কথা নিয়ে আজ আন্দোলনের দরকার নেই। শ্রীমতী গিরিবালার তিরোধানসম্ভাবনা থাকে তো থাক্, আজ যখন তাঁর শুভাগমন হয়েছে তখন সেটা আনন্দের বিষয় সন্দেহ নেই।

 এবারকার পত্রে অবগত হওয়া গেল যে, আমার ঘরের ক্ষুদ্রতমাটি