পাতা:অধ্যাত্ম-রামায়ণম্‌ - পঞ্চানন তর্করত্ন.pdf/১৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সুন্দরকাণ্ড । স্তায় আকাশমণ্ডলে উত্থিত হইল । অনস্তর ইশ্রজিং নভোমণ্ডলে বিচরণশীল হনুমানকে শর.সিকর দ্বারা বিদ্ধ করিয়া অর্থাং আট বাণে তাহার মস্তক, ছয় বাণে বক্ষঃস্থল ও চরণদ্বয় এবং এক বাণে লাঙ্গুল বিদ্ধ করিয়া ঘোরতর সিংহনাদ করিতে লাগিল। অনন্তর বীর্য্যবান হনুমান, হুইচিত্তে স্তস্তাঘাতে সারথিকে বধ করিল এবং ক্ষণকালের মধ্যে অশ্ব-সহিত রথ চুর্ণ করিয়া ফেলিল । পরে, মহাবল পরাক্রান্ত মেঘনাদ অন্তরথে আরোহণপূর্বক ব্রহ্মাস্ত্র-প্রহারে বানর-শ্রেষ্ঠকে বন্ধন করিয়া সত্বর রাবণ-রাজের সমীপে লইয়া গেল। সর্ব্বদা 'র্যাহার নাম জপ করিলে ক্ষণমধ্যে অজ্ঞান সস্তুত কর্ম্মবন্ধন হইতে বিমুক্ত হইয়া সদ্যঃই কোটি. স্বর্য্য-সম-প্রভ মঙ্গলময় তদীয় ধামে গমন করা যায় ; পবন-নন্দন, সেই রামচন্ত্রের পাদপদ্ম স্বীয় হৎপদ্মে নিরস্তর নিবেশিত করিয়া সকল সময়েই সমস্ত বন্ধন হইতে মুক্ত ছিল; সুতরাং ব্রহ্মাস্ত্র-পাশে বা অন্য কোন বন্ধনে তাহার আর দুঃখ কি ? । তৃতীয় অধ্যায় সমাপ্ত । চতুর্থ অধ্যায় । পাশ-বন্ধনে দৃঢ়বদ্ধ বানর-শ্রেষ্ঠ যেন বিশেষ ভয়ে ভয়ে নগরের দিকে চাহিতে চাহিতে চলিয়াছে, দেখিবার জন্য নগরবাসিগণ চতুর্দিক হইতে তাহার অনুসরণ করিল এবং অতীব ক্রোধ সহকারে তাহাকে মুষ্ট্যাঘাত ও চপেটাঘাত করিতে লাগিল । ব্রহ্মার-বর প্রভাবে ব্রহ্মাস্ত্র ইহাকে অধিকক্ষণ পীড়া দেয় নাই ; ক্ষণমাত্র স্পর্শ করিয়া চলিয়া গিয়াছিল। হনুমান, তাহ জানিয়াও বিশেষ গুরুতর কার্য্য সাধন করিবার অভিপ্রায়ে অকিঞ্চিৎকর রজ্জ্বনিকরে বদ্ধ হইয়াই গমন করিতে লাগিল। ইস্রজিং সেই হনুমানকে সভামধ্যস্থিত রাবণের সম্মুখে রাখিয়া বলিতে লাগিল; “আমি ইহাকে ব্রহ্মাস্তু দ্বারা বন্ধন করিয়া আনিয়াছি;—এই বানর, প্রধানু প্রধান রাক্ষসগণকে বধ করিয়াছে। আর্য্য ! এক্ষণে যাহা উচিত হয়, মন্ত্রিগণের সহিত বিচার করিয়া তাহা করুন; এই বানর সামান্ত নহে।” অনস্তুর রাক্ষসরাজ সম্মুখে অবস্থিত অঞ্জন-শৈলপ্রভ কৃষ্ণবর্ণ প্রহস্তের দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া কহিল –‘প্রহস্ত। ইহাকে জিজ্ঞাসা কর ;–এষ্ট বানর কেন আসিয়াছে ? এ স্থানে উহার প্রয়োজন কি ? কোথা Ե-Գ হইতে আসিয়াছে, আমার সমস্ত বন উম্মলিত করিয়াছে কি জন্তু ? এবং বলপূর্ব্বক আমার রাক্ষস গণকেই বা বধ করিল কেন ?" অনস্তর প্রহস্ত হনমানকে সাদরে জিজ্ঞাসা করিল—“বানর ! তোমাকে এস্থানে পাঠাইল কে ? তোমার ভয় নাই, আমি তোমাকে মুক্ত করিয়া দিব। এই ত্রিভুবনেশ্বর রাবণের সমীপে সত্য বল" । অনস্তুর পবননন্দন, অতি আনন্দে, ত্রিলোক-কণ্টক, বৈরী রাক্ষসের প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া বার বার রামচন্দ্রকে মনে মনে স্মরণ করত ক্রমে তাহার পবিত্র কথা বলিতে আরস্তু করিল। “হে দেবাদি শত্রু । সুস্পষ্টভাবে শ্রবণ কর । কুকুর যেমন উৎকৃষ্ট হবি হরণ করে, সেইরূপ তুমি সম্প্রতি আপনার মরণের জন্ত যে ত্রিলোকনাথের ভার্য্যা অপহরণ করিয়া আনিয়াছ, আমি সেই সর্ব্বাস্তা রামচন্দ্রের দৃত। সেই রাঘব, মতঙ্গ পর্ব্বতে (ঋষ্যমুকে ) আগমনপূর্ব্বক অগ্নিসন্নিধানে সুগ্রীবের সহিত বন্ধুত্ব স্থাপন করিয়া একবাণে বালী বধ করেন এবং সেই সুগ্রীবকেই রাজা করেন । রাক্ষসরাজ ! সেই বানরাধিপতি মহাবল সুগ্রীব ক্রুদ্ধ হইয়া মহাবল পরাক্রান্ত কোটি কোটি বানর-যুথ এবং রাম-লক্ষণের সহিত প্রবর্ষণ পর্ব্বতে অবস্থান করিতেছেন। সুগ্রীব, ধরণীনন্দিনীকে অন্বেষণ করিবার জন্ত দশদিকে প্রধান প্রধান বানর শ্রেষ্ঠদিগকে পাঠাইয়াছেন ; তাহদিগের মধ্যেই আমি একজন বানর ; আমি পলনের পুত্র ; সীতাকে খুজিতে খুজিতে ক্রমে এখানে আসিয়া উপস্থিত হইয়াছি । আমি কমলদলনয়ন সীতাকে দেখিতে পাইয়াছি ; বানর স্বভাব বলিয়া বন বিনষ্ট করিয়াছি । তাহার পর দেখিলাম ধনুর্ব্বাণধারণ করিয়া বহুতর রা ক্ষস আমাকে বধ করিবার জন্তু বেগে আসিতেছে, আমি নিজ শরীর রক্ষার্থ তাহাদিগকে বধ । করিয়াছি; রাজন্‌ ! দেহ-সকল প্রাণীরই প্রিয় পদার্থ। অনন্তর মেঘনাদ নামে একজন, ব্রহ্মাস্ত্র পাশদ্বারা আমাকে বন্ধন করিয়া লইয়া আসিয়াছেন । ব্রহ্মা, আমাকে যে বর দেন, তাহার প্রভাবে ব্রহ্মাস্ত্র মাত্র স্পর্শ করিয়া আমাকে পরিত্যাগ করত চলিয়া গিয়াছে ; এই সকল আমি জানিতে পারিতেছি । তথাপি রাবণ! আমি দয়াদ্র চিত্ত বলিয়া তোমাকে হিত উপদেশ করিবার জন্য বন্ধের ন্যায় হইয়া (এখানে ) আসিলাম ! হে রাবণ। বিবেক-বলে শোকের অবস্থা পর্য্যালোচনা করিয়া প্রাণীদিগের নিরতিশয় হিতের জন্য সংসার-মোচনী দৈবী গতি (পত্নপী