পাতা:বিবিধ সমালোচন (বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়).pdf/১৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২২
বিবিধ সমালোচন।

খাদ্যের মধ্যে খিচুড়ি, তেমনি মনুষ্যের মধ্যে নব্য বাঙ্গালি। যেমন ক্ষীরোদ সমুদ্র মন্থন করিলে চন্দ্র উঠিয়া জগৎ আলো করিয়াছিল—তেমনি পশুচরিত্র সাগর মন্থন করিয়া, এই অনিন্দনীয় বাবু চাঁদ উঠিয়া ভারতবর্ষ আলো করিতেছেন। রাজনারায়ণ বাবুর ন্যায় যে সকল অমৃতলুব্ধ লোক রাহু হইয়া এই কলঙ্কশূন্য চাঁদকে গ্রাস করিতে যান, আমরা তাঁহাদের নিন্দা করি। বিশেষতঃ রাজনারায়ণ বাবুকে বলি, যে আপনিই এই গ্রন্থমধ্যে গোমাংসভোজন নিষেধ করিয়াছেন, তবে বাঙ্গালির মুণ্ড খাইতে বসিয়াছেন কেন?—গোরু হইতে বাঙ্গালি কিসে অপকৃষ্ট? গোরুও যেমন উপকারী, নব্য বাঙ্গালিও সেইরূপ। ইহারা সম্বাদ পত্র রূপ, ভাণ্ড২ সুস্বাদু দুগ্ধ দিতেছে; চাকরি লাঙ্গল কাঁধে লইয়া, জীবনক্ষেত্র কর্ষণ পূর্ব্বক ইংরেজ চাষার ফশলের যোগাড় করিয়া দিতেছে; বিদ্যার ছালা পিঠে করিয়া কালেজ হইতে ছাপাখানায় আনিয়া ফেলিয়া, চিনির বলদের নাম রাখিতেছে; সমাজ সংস্কারের গাড়িতে বিলাতি মাল বোঝাই দিয়া, রঙ্গের বাজারে চোলাই করিতেছে; এবং দেশহিতের ঘানিগাছে স্বার্থশর্ষপ পেষণ করিয়া, যশের তেল বাহির করিতেছে। এতগুণের গোরুকে কি বধ করিতে আছে?

 যিনি বাঙ্গালির যত নিন্দা করেন, বাঙ্গালি তত নিন্দনীয় নহে। রাজনারায়ণ বাবুও বাঙ্গালির যত নিন্দা করিয়াছেন, বাঙ্গালি তত নিন্দনীয় নহে। অনেক স্বদেশবৎসল যে অভিপ্রায়ে বাঙ্গালির নিন্দা করেন, রাজনারায়ণ বাবুও সেই অভিপ্রায়ে বাঙ্গালির নিন্দা করিয়াছেন— বাঙ্গালির হিতার্থ। সে কালে আর এ কালে নিরপেক্ষ ভাবে তুলনা তাঁহার উদ্দেশ্য নহে—একালের দোষনির্ব্বাচনই তাঁহার উদ্দেশ্য। একালের গুণ গুলির প্রতি তিনি বিশেষ দৃষ্টিক্ষেপ করেন নাই—করাও