পাতা:বিবিধ সমালোচন (বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়).pdf/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪
বিবিধ সমালোচক।

আসিলেন। বাসন্তী তখন মুক্তকণ্ঠা হইয়া কহিলেন, “দেব! কঠিন হইলে কি প্রকারে?

ত্বং জীবিতং ত্বমসি মে হৃদয়ং দ্বিতীয়ং
ত্বং কৌমুদী নয়নয়োরমৃতং ত্বমঙ্গে।

 তুমি আমার জীবন, তুমি আমার দ্বিতীয় হৃদয়, তুমি নয়নের কৌমুদী, অঙ্গে তুমি আমার অমৃত,—এইরূপ শত২ প্রিয় সম্বোধনে যাহাকে ভুলাইতে তাহাকে—” বলিতে২ সীতাস্মৃতিমুগ্ধা বাসন্তী আর বলিতে পারিলেন না। অচেতন হইলেন। রাম তাঁহাকে আশ্বস্তা করিলেন। চেতনা পাইয়া বাসন্তী কহিলেন “আপনি কেমন করিয়া একাজ করিলেন?”

 রাম। লোকে বুঝে না বলিয়া।

 বাসন্তী। কেন বুঝে না!

 রাম। তাহারাই জানে।

 তখন বাসন্তী আর সহিতে পারিলেন না। বললেন, “নিষ্ঠুর। দেখিতেছি, কেবল যশঃ তোমার অত্যন্ত প্রিয়!”

 এই কথোপকথনের প্রশংসা করা বৃথা। সীতাবিসর্জ্জন জন্য বাসন্তী রামপ্রতি ক্রোধযুক্তা হইয়াছিলেন, তিনি মানসিক যন্ত্রণাস্বরূপ সেই অপরাধের দণ্ড প্রণীত করিলেন; সহজেই রামের শোকসাগর উছলিয়া উঠিল। রামের যে একমাত্র শোকোপশমের উপায় ছিল—আত্মপ্রসাদ,—তাহাও বিনষ্ট করিলেন। রাম জানিতেন যে তিন প্রজারঞ্জনরূপ কুলধর্ম্মের রক্ষার্থই সীতাবিসর্জ্জনরূপ মর্ম্মচ্ছেদী কার্য্য করিয়াছেন।— মর্ম্মচ্ছেদ হউক, ধর্ম্ম রক্ষা হইয়াছে। বাসন্তী দেখিলেন যে সে ধর্ম্মরক্ষা কেবল স্বার্থপরতার পৃথক্ একটি নামমাত্র। সে কুলধর্ম্ম রক্ষার বাসনা কেবল রূপান্তরিত যশোলিপ্সা মাত্র। কেবল যশোলাভের স্বার্থপর বাসনার বশবর্ত্তী হইয়া রাম এই